কাটোয়া কলেজ

খাতা লুঠ করায় অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা

মারধর, শিক্ষকদের ঘেরাও করে রাখার মতো অভিযোগ আগে উঠেছে। এ বার পরীক্ষার খাতা লুঠ করতে যাওয়ার অভিযোগও উঠল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। খাতা লুঠ আটকাতে গিয়ে প্রহৃতও হলেন তিন অশিক্ষক কর্মচারী। মঙ্গলবার বিকেলে কাটোয়া কলেজে কেতুগ্রামের রাধাকান্ত কুণ্ডু মহাবিদ্যালয়ের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৯
Share:

ঘটনার পরে থমথমে কলেজ চত্বর। ইনসেটে, আহত কলেজ কর্মী। —নিজস্ব চিত্র।

মারধর, শিক্ষকদের ঘেরাও করে রাখার মতো অভিযোগ আগে উঠেছে। এ বার পরীক্ষার খাতা লুঠ করতে যাওয়ার অভিযোগও উঠল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। খাতা লুঠ আটকাতে গিয়ে প্রহৃতও হলেন তিন অশিক্ষক কর্মচারী।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকেলে কাটোয়া কলেজে কেতুগ্রামের রাধাকান্ত কুণ্ডু মহাবিদ্যালয়ের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে শিক্ষক মহলে। রাতে কাটোয়া মহকুমাশাসকের বাংলোয় গিয়ে পুরো ঘটনা জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ, একাধিক শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীরা। অধ্যক্ষ নির্মল সরকারের অভিযোগ, ‘‘একদল পরীক্ষার্থী ও বহিরাগতরা মিলে কলেজের পরীক্ষার খাতা রাখা হয় যে ঘরে, সেখানে হামলা চালিয়েছে। তাতে আমাদের কলেজের তিন অশিক্ষক কর্মচারী জখমও হয়েছেন। পুরো বিষয়টি কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা মহকুমাশাসককে জানানো হয়েছে।’’

তবে ঘটনার সূত্রপাত বেশ কয়েকদিন আগে। শিক্ষকেরা জানান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পার্ট ১ পরীক্ষা চলছে। কান্দরা রাধাকান্ত কুণ্ডু মহাবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছেন কাটোয়া কলেজে। তাঁদের অভিযোগ, প্রথম দিনেই টুকলি সমেত ধরা পড়েছিলেন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস। তাঁর খাতা আটকে রেখেছিলেন পরীক্ষকেরা। শেষে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাইলে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধঘন্টা আগে দেবজ্যোতিকে পরীক্ষা দিতে দেন শিক্ষকেরা। শিক্ষকদের দাবি, সেই রাগের ঝাল মেটাতেই মঙ্গলবারের এই ঘটনা ঘটান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ওই নেতা।

Advertisement

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দর্শন পরীক্ষার শেষে একটি খাতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে কান্দরা রাধাকান্ত কুণ্ডু মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র এক্রামুল শেখের নামে কাটোয়া থানায় অভিযোগ করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, ওই ছাত্রটির খাতা মিলছে না। সেই মতো মঙ্গলবার বিকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার শেষে কাটোয়া থানার পুলিশ ওই ছাত্রটিকে কলেজের ভিতর বারান্দায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এর পরেই কান্দরা রাধাকান্ত কুণ্ডু মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসের নেতৃত্বে বহিরাগতরা কলেজের ভিতর ঢুকে পড়ে। জুটে যায় অন্য পরীক্ষার্থীদেরও। এরপরেই কলেজের বাগানের কাছে পড়ে থাকা বাঁশ, লাঠি ও কাঠের টুকরো নিয়ে হামলা চালান তারা। অভিযোগ, প্রথমেই কলেজের শিক্ষকদের ঘরে গিয়ে ভাঙচুর চালায় তারা। তারপর একদল ছাত্র কলেজের চার তলায় পরীক্ষা কেন্দ্রের ইন চার্জের ঘরে ঢুকে পড়ে। কলেজের অশিক্ষক কর্মী অসিত মণ্ডল ও প্রশান্ত দাস তখন পরীক্ষার খাতাগুলি আলাদা করে রাখছিলেন ওই ঘরেই। ছোট ঘরে এক দল উত্তেজিত পরীক্ষার্থী ঢুকে পড়ায়, তাঁরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান। মওকা বুঝে পরীক্ষার্থীরা খাতাগুলি টানাটানি করতে শুরু করে দেন। অভিযোগ, ওই দুই অশিক্ষক কর্মচারী বাধা দিলে তাঁদের মাথায় বাঁশ ও চ্যালা কাঠ দিয়ে আঘাত করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থাতে কোনওরকমে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন তাঁরা। ওই দু’জন বলেন, “খাতা লুঠ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। খাতাগুলি আটকানোর জন্য উত্তেজিত পরীক্ষার্থীদের বাধা দিতেই আমাদের লাঠি ও কাঠের টুকরো দিয়ে মারধর করা হয়।’’ দু’জনকেই কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে-র দাবি, ‘‘কোনও কলেজেই পড়ার পরিবেশ নেই। এ বার তো খাতা লুঠ করতে চেয়েছিল তৃণমূলের নেতারা। সেই লুঠ আটকাতে গিয়ে আক্রান্ত হলেন অশিক্ষক কর্মচারীরা। এ ঘটনা সমাজের লজ্জা।” ঘটনার জেরে চরম অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে জেলা টিএমসিপি নেতৃত্বও। সংগঠনের জেলা সভাপতি বাপ্পা বন্দ্যোপাধ্যায় অস্বস্তি কাটাতে বলেন, “প্রশাসন প্রশাসনের মতো ব্যবস্থা নিক। আমরা নাক গলাব না। তবে আমরাও তদন্ত করে যদি দেখি, সংগঠনের কেউ জড়িত রয়েছে, তাহলে সেই মতো ব্যবস্থা নেব।” অভিযুক্ত কান্দরা রাধাকান্ত কুণ্ডু মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসকে অবশ্য ফোনে পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন