তৃণমূলের অফিসে তালা দিল নির্দল

ভোটে হেরে গেলেও গলসি ১ ব্লকের পোতনা-পুরসায় সেই রামপুর গ্রামে তৃণমূলের অফিস থেকে কর্মীদের বের করে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই নির্দল সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গলসি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০১:৪৬
Share:

গলসির রামপুরে তালা ঝোলানো হয়েছে এই অফিসে। ছবি: কাজল মির্জা

দল টিকিট না দেওয়ায় নির্দল হিসেবে ভোটে লড়েছিলেন তৃণমূলের কর্মীরা। গ্রামের দু’টি আসনে শাসক দলের সঙ্গে লড়াই হয়েছিল সেই নির্দলের। ভোটে হেরে গেলেও গলসি ১ ব্লকের পোতনা-পুরসায় সেই রামপুর গ্রামে তৃণমূলের অফিস থেকে কর্মীদের বের করে সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ওই নির্দল সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

শুক্রবার রাতে এই ঘটনার পরে নির্দল কর্মী-সমর্থকদের দাবি, ওই পার্টি অফিস থেকে ইদানীং আসমাজিক কার্যকলাপে মদত দিচ্ছেন তৃণমূলের লোকজন। তাই তালা ঝোলানো হয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ভোটে হারের পর থেকে গ্রামে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে নির্দলেরা। গায়ের জোরে পার্টি অফিসের দখল নিতে চাইছে। দলের উচ্চ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

রামপুর গ্রামের রামসায়ের পূর্ব পাড়ে রয়েছে তৃণমূলের ওই অফিসটি। ইটের দেওয়াল ও টিনের ছাউনির এই অফিস থেকেই গ্রামে দু’টি সংসদে দলের কাজকর্ম পরিচালনা করেন তৃণমূল কর্মীরা। দশ বছর ধরে ওই অফিসে বসেই দলের কাজকর্ম হয় বলে জানান তাঁরা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী রয়েছে। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বাধে। দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে নামে এক পক্ষ। শাসক দল সূত্রের খবর, দলের অন্দরে ব্লক যুব সভাপতি পার্থসারথি মণ্ডলের অনুগামী বলে পরিচিত ওই নির্দলেরা। এ বার গ্রামের দু’টি আসনে টিকিট পান দলের ব্লক সভাপতি জাকির হোসেনের অনুগামী রেবা বাগদি ও জয়দেব ঘোষ। জয়দেববাবু নির্দল প্রার্থী পার্থ ঘোষকে ৭৫ ভোটে ও রেবাদেবী ২১ ভোটে নির্দল পার্থী চম্পা বাগদিকে হারিয়ে দেন। নির্দল প্রার্থী ও সমর্থকেরা অবশ্য অভিযোগ করেন, তাঁদের ভোট গণনাকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গণনায় কারচুপি করে হারানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফল বেরোনোর পর থেকে গ্রামে বিশেষ কোনও অশান্তি হয়নি। কিন্তু, শুক্রবার রাতে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী জয়দেববাবুর ভাই সঞ্জীব ঘোষ ও দলের কয়েকজন কর্মী ওই পার্টি অফিসটি খুলতেই গণ্ডগোল শুরু হয়। নির্দল পক্ষ সেখানে চড়াও হয়ে তৃণমূল কর্মীদের মারধর করে অফিস থেকে বের করে তালা ঝুলিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। জয়দেববাবু অভিযোগ করেন, হেরে যাওয়ার পর থেকেই গ্রামে অশান্তি পাকাতে চাইছে নির্দলেরা। বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে সন্ত্রাস চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘সন্ধ্যায় আমাদের কয়েকজন কর্মী পার্টি অফিস খুলে কাজকর্ম করছিলেন। তাঁদের মারধর করেছেন নির্দল প্রার্থী পার্থ ঘোষ ও তাঁর বেশ কিছু অনুগামী। অফিসটিতে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছে ওরা।’’ তাঁর দাবি, রমজানের সময়ে তাঁরা অশান্তি চান না। তাই ঘটনার প্রতিবাদ করতে এগোননি দলের কর্মীরা। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্ব ও পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে।’’

নির্দল প্রার্থী ও সমর্থকদের পাল্টা দাবি, এক সময়ে ওই পার্টি অফিসটি গ্রামের ক্লাবঘর ছিল। বছর পাঁচেক আগে সেটিতেই দলের কর্যালয় করা হয়। নির্দল প্রার্থী পার্থবাবু দাবি করেন, ‘‘আমরাই তৃণমূল করতাম। এখন কিছু লোক তৃণমূলের নাম করে দলের বদনাম করছে। ওই পার্টি অফিসে বসে ইদানীং অসামাজিক কাজে মদত দেওয়া হচ্ছে। বোমা বাঁধা হচ্ছে, আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করা হচ্ছে। তাই আমরা ওই অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি।’’ তাঁদের দাবি, ওই অফিস আর খুলতে দেবেন না তাঁরা। সেখানে আগের মতো ক্লাবঘর করা হবে।

ব্লক তৃণমূল সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘‘দলের কর্মীরা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। নির্দলদের অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দলের ব্লক যুব সভাপতি পার্থসারথিবাবুর সঙ্গে এ দিন ফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন