প্রশ্ন উঠেছিল অনেক দিন আগেই। এ বার তার সারবত্তা খুঁজতে সাবেক কুলটি পুরসভার আয়-ব্যয়ের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষণ (অডিট) করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি অডিট সংস্থার আধিকারিকেরা সেই কাজ শুরুও করে দিয়েছেন। তবে পুর কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে রীতিমতো চাপানউতোর তৈরি হয়েছে পুরসভা ও শাসকদলের অন্দরে।
২০১৫ সালে কুলটি, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়াকে আসানসোলের সঙ্গে জুড়ে বড় পুরসভা তৈরি হয়। সেই সময়ে কুলটি পুরসভার যাবতীয় আয়-ব্যয় ও নানা উন্নয়নমূলক কাজের হিসেব জমা দেওয়া হয় পুরসভার দফতরে। পুরসভা সূত্রের খবর, জমা দেওয়া ওই হিসেবে অসঙ্গতি ধরেন পুরসভার কর্তাদের একাংশ। তাঁরা মেয়রকে সাবেক কুলটি পুরসভার গত ১০ বছরের অভ্যন্তরীণ অডিট করানোর প্রস্তাব দেন। মেয়র ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত হিসেবের অডিট করানোর ব্যাপারে সম্মতি দেন। তিনি বলেন, ‘‘অডিট শেষ হওয়ার পরেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখনই এ বিষয়ে আর কিছুই বলার নেই।’’
প্রশ্ন যেখানে
• বস্তিবাসীর জন্য ৪২০০ বাড়ি তৈরির অনুদান এলেও বেশির ভাগই হয়নি।
• জিটি রোড-সহ নানা রাস্তায় বসানো বহু ত্রিফলা জ্বলেনি। টাকা পেয়ে গিয়েছেন ঠিকাদার।
• নিম্নমানের বিদ্যুৎ সরঞ্জাম সরবরাহ সত্ত্বেও বেশি টাকার বিল মঞ্জুর।
• টেন্ডার না ডেকে হোর্ডিং লাগিয়ে বহু টাকা তছরুপ।
• জলপ্রকল্পের জন্য কয়েক লক্ষ টাকার পাইপ কিনে ফেলে রেখে নষ্ট।
• সাফাইয়ের আধুনিক গাড়ি কিনেও ঠিকা ব্যবস্থায় শহর সাফ করিয়ে বিল মেটানো হয়েছে।
• চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে ভুয়ো অস্থায়ী কর্মীদের নাম ঢুকিয়ে বেতন বাবদ টাকা তোলা।
পুরসভার এক কর্তার দাবি, কুলটিতে ওই সময়কালে বিভিন্ন আর্থিক ও উন্নয়নমূলক কাজে বেনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে। বস্তিবাসীদের জন্য বাড়ি তৈরি, রাস্তায় ত্রিফলা বসানো, টেন্ডার না ডেকেই কাজের বরাত দেওয়া, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি, জলপ্রকল্পের নামে পাইপ কিনে ফেলে রেখে নষ্ট করা— অভিযোগ বহু। এই ধরনের বেনিয়মের সঙ্গে ওই পুরসভার তখনকার কাউন্সিলর-সহ কর্মীদের একাংশ যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করে এসেছে বিরোধীরা ও তৃণমূলের একাংশ। এ সব কাজে কয়েক জন ঠিকাদার-সহ তৎকালীন পুর আধিকারিকদের একাংশ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
সেই সময়ে পুরসভায় নানা দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছিল কুলটির তৃণমূলেরই একাংশ। তাদের দাবি ছিল, পুর কর্তৃপক্ষ ঘনিষ্ঠ কিছু ঠিকাদারকে সব কাজের বরাত দিচ্ছেন। কাজ না করা সত্ত্বেও টাকা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদারদের, নিম্নমানের জিনিস দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে— এমন নানা অভিযোগ উঠেছিল। আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষ অডিটের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তৃণমূলের ওই অংশ খুশি। তাদের দাবি, দুর্নীতি হয়েছে কি না তা এ বার পরিষ্কার হয়ে যাবে।
পুরসভা সুত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে কুলটি পুরসভার ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। পুরপ্রধান হন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। দু’বছরের মাথায় তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে বামেরা। উজ্জ্বলবাবু আস্থা ভোটে হেরে যান। পুরপ্রধান হন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা বিমান আচার্য। বছর দেড়েক বাদে ফরওয়ার্ড ব্লকের চার কাউন্সিলরকে দল ছেড়ে তৃণমূলে আসার পরে উজ্জ্বলাবাবু বিমানবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। বিমানবাবু হেরে যান। পুরপ্রধান মনোনীত হন মধুরকান্ত শর্মা।
২০০৯ সালে ভোটে জিতে ফের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। আবার পুরপ্রধান হন উজ্জ্বলবাবু। ২০১৪ পর্যন্ত তিনিই এই পদে ছিলেন। অডিট ও নানা দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে অবশ্য তৎকালীন পুর কর্তৃপক্ষের কেউ মন্তব্য করতে চাননি।