শৌচাগার ব্যবহার ও সাফাই অভিযানের সাফল্য দেখিয়ে বর্ধমানকে ‘নির্মল জেলা’ ঘোষণার তোড়জোড় চলছে। অথচ সেই জেলাতেই গ্রাহকদের সই ও ছবি জাল করে শৌচাগারের টাকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরির পঞ্চায়েত প্রধান ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বাসিন্দাদের একাংশ এমনই অভিযোগ জানিয়েছেন বিডিও-র কাছে।
প্রশাসন জানায়, ২০১৫-১৬ আর্থিক বর্ষে ‘বেসলাইন সার্ভে’ অনুযায়ী গঙ্গাটিকুরি গ্রামের ৪৪২ জনের শৌচাগার পাওয়ার কথা ছিল। বছর শেষ হলেও ১১০ জন এখনও শৌচাগার পাননি বলে অভিযোগ। কেউ আবার শৌচাগার পেলেও তা অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
নিয়ম অনুসারে, ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে প্রতিটি পঞ্চায়েত সমীক্ষা করে যাঁদের বাড়িতে শৌচাগার নেই, তাঁদের নামের তালিকা ব্লকে পাঠায়। ব্লক থেকে মাথা পিছু ১০ হাজার টাকা করে ঠিকাদারদের দেওয়া হয়। আর গ্রাহক দেন ৯০০ টাকা। সুমন্ত লাহা, সমীর দাস, সুফল দাস নামে কয়েক জন বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘এক বছর আগে ন’শো টাকা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু শৌচাগার হয়নি। জনস্বাস্থ্য দফতরে খোঁজ নিয়ে দেখি, কাজ শেষের বিল দেখিয়ে ঠিকাদারেরা আমাদের সই ও ছবি জাল করে প্রায় ১২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। বিলে সই রয়েছে পঞ্চায়েত প্রধান জগন্নাথ মাঝিরও।’’
পেশায় দিনমজুর সুকুমার দাস, গৌর দাসদের আরও অভিযোগ, ‘‘ঠিকাদারেরা বলেছিলেন ন’শো টাকা নিয়ে যাবেন। কিন্তু ওনাদের দেখাই মেলেনি। শৌচাগারও তৈরি হয়নি। যদিও খাতায়-কলমে আমাদের নামে শৌচাগার রয়েছে।’’ তৈরি হওয়া শৌচাগারগুলিরও নির্মাণ সামগ্রী নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। গৌতম দাস নামে এক জনের দাবি, শৌচাগারে দরজা নেই। কারও আবার শৌচাগারের ছাদই তৈরি হয়নি।
বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভ, ‘নির্মল বাংলা’ কর্মসূচিকে সফল করতে বেশ কিছু দিন ধরেই মন্ত্রী ও আমলারা পথে নেমে প্রচার চালিয়েছেন। সম্প্রতি সাফাই অভিযানে ঝাঁটা হাতে নেমে পড়তে দেখা যায় জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডুকেও। তার পরেও এমন অভিযোগ নেতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বলে দাবি।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার সন্তোষ মণ্ডল, রফিক শেখ, ভগীরথ ঘোষ, ইশাক বিশ্বাস এবং পঞ্চায়েত প্রধান জগন্নাথবাবু। প্রধানের দাবি, ‘‘বারবার বলেও অনেকেই ন’শো টাকা জমা দেননি।’’ কেতুগ্রাম ২-এর বিডিও অর্ণব সাহার আশ্বাস, ‘‘দশ দিনের মধ্যে ওই ১১০ জন অভিযোগকারীর শৌচাগার সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছি প্রধানকে। ঠিকাদাররা কোনও কারচুপি করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব।’’