কালী পুজোয় এখনও অন্নক্ষেত্র বসে গ্রামে

বড়পুকুরের জলে ঘট ভরে শুরু হয় পুজো। বিসর্জনও হয় সেই পুকুরেই। প্রায় দেড়শো বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে কালনার দেয়াড়া গ্রামের নাথবাড়িতে।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৩
Share:

কালনার দেয়াড়া গ্রামের নাথবাড়ির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।

বড়পুকুরের জলে ঘট ভরে শুরু হয় পুজো। বিসর্জনও হয় সেই পুকুরেই। প্রায় দেড়শো বছর ধরে এমনটাই চলে আসছে কালনার দেয়াড়া গ্রামের নাথবাড়িতে। সঙ্গে আশপাশের গ্রামের মানুষজনের জন্য অন্নক্ষেত্রও আয়োজন করেন পরিবারের সদস্যেরা।

Advertisement

বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের প্রাচীন গ্রামগুলির মধ্যে একটি দেয়াড়া। এ গ্রামেই সাতপুরুষ ধরে বাস নাথ পরিবারের। ১৮৭০ সালে পরিবারের পঞ্চম পুরুষ অতুলকৃষ্ণ নাথ শুরু করেন কালীপুজো। প্রথমে মাটির দেওয়াল এবং খড়ের চালের ঘরেই পুজো শুরু হয়। পরে কংক্রিটের মন্দির তৈরি হয় দেবীর জন্য। বাড়ির প্রবীণ সদস্যেরা জানান, চাষবাসের উপর নির্ভরশীল অতুল কৃষ্ণ একবার চরম অর্থ সঙ্কটে পড়েছিলেন। তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র শঙ্করলালও কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন সেই সময়েই। বিপাকে পড়ে দু’বছর পুজো বন্ধ রাখেন তাঁরা। কিন্তু দেবী স্বপ্নাদেশে অতুলকৃষ্ণকে ফের পুজো শুরু করতে বলেন। পুজো করার পরেই সংসারে যেমন সংসারে শ্রীবৃদ্ধি আসে, তেমনি শঙ্করলাল রোগ মুক্ত হন বলেও পরিবারের সদস্যদের দাবি।

পরিবারের দাবি, রাত দশটার পরে পুজো শুরু হয়। তার আগে গ্রামের বড়পুকুর থেকে ঘটে জল ভরে নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। দেবীর পুজো করেন শিব গোত্রীয় ব্রাক্ষণেরা। সারারাত ধরে চলা পুজোয় দেবীকে ভোগ দেওয়া হয় খিচুড়ি, পায়েস, ক্ষীর, ছানা, লুচি, নাড়ু। সঙ্গে থাকে আলু, পটল, মুলো, ফুলকপি এবং পালংশাক ভাজা। বাড়ির সদস্যেরা জানান, আগে পুজো শেষ হওয়ার পরে গ্রামের বহু বাড়িতে প্রসাদ পৌঁছে দেওয়া হত। এখন অবশ্য সে রেওয়াজ ভেঙেছে। এখন গঙ্গাস্নান করে পুজোর আগের দিন থেকেই নিরামিষ খেতে শুরু করেন বাড়ির লোকেরা। মাছ মুখে দেন পুজো শেষে। এর সঙ্গে গত ১৫ বছর ধরে নাথ পরিবারের সদস্যরা বাড়ির সামনে একটি ঘেরা যায়গায় অন্নক্ষেত্রের আয়োজন করেন। তাতে গ্রামের মানুষ ছাড়াও পাশের দেউলপাড়া, কয়া এবং গোয়ারা গ্রামের বহু মানুষের পাত পরে। প্রাচীন রেওয়াজ মেনে প্রতিমার শোভাযাত্রা বের হয়। আগে কাঁধে ঘোরানো হলেও এখন ভ্যানে করেই প্রতিমাকে গ্রাম ঘোরানো হয়। শোভাজাত্রায় থাকে আলো, মাইক এবং ঢাক।

Advertisement

ইতিমধ্যেই পুজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে নাথবাড়িতে। ঠাকুর ঘর, ঢাকিদের ঘর, মণ্ডপ প্রাঙ্গনে চলছে জোর প্রস্তুতি। ঠাকুর গড়ার কাজও এগিয়ে গেছে অনেকটা। পরিবারের সদস্য শ্যামাপ্রসাদ নাথ বলেন, ‘‘পুজোর বয়স যত বেড়েছে তত বেড়েছে জৌলুস। পুরনো সমস্ত নিয়মই নিষ্ঠাভরে পালন করা হয়।’’ বাড়ির আর এক সদস্য দেবাশিস নাথ জানান, পুজোর বেশি ভাগ খরচই আসে জমি থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement