সেলের চেয়ারম্যান সিএস বর্মার নির্দেশেই গড়া হল কমিটি। নিজস্ব চিত্র।
ডিএসপি-তে দুর্ঘটনায় জখম আরও এক কর্মীর মৃত্যু হল বৃহস্পতিবার। রঞ্জিত ঘোষ (৪৫) নামে ওই কর্মী দুর্গাপুরের বিধাননগরে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ দিনই আবার মৃত শিক্ষানবীশ কর্মী দীপক দলুইয়ের দেহ ওই হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেলেন তাঁর বাবা-মা। দুর্ঘটনার তদন্তে ডিএসপি-র গড়া কমিটি ভেঙে দিয়ে বিভিন্ন ইস্পাত কারখানার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে চার সদস্যের নতুন কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেছে সেল।
সোমবার কারখানায় গলিত লোহা ছিটকে দগ্ধ হন আধিকারিক রোহিত কুমার, কর্মী রঞ্জিতবাবু ও শিক্ষানবীশ দীপক। প্রথমে তাঁদের ডিএসপি হাসপাতালে, পরে বিধাননগরের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁদের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডও গড়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার মৃত্যু হয় দীপকের।
ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দাবিতে বুধবার দিনভর হাসপাতাল থেকে দীপকের দেহ বের করতে দেননি তাঁর সহকর্মী শ’খানেক শিক্ষানবীশ কর্মী। বেসরকারি হাসপাতালের সামনে সারা দিন তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ করেন। সন্ধ্যায় সেলের চেয়ারম্যান সিএস বর্মা হাসপাতালে পৌঁছে তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরেও দেহ বের করতে দেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দীপকের পরিবারের লোকজনদকে খোঁজার জন্য পুলিশের কাছে আর্জি জানান। দীপকের বাবা সুভাষবাবু এবং মা সাবিত্রীদেবী শিক্ষানবীশ কর্মীদের সঙ্গেই ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ জানায়, এ দিন দুপুরে দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ছেলের দেহ তাঁদের তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
শিক্ষানবীশ কর্মীদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের লাঠি দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দীপকের বাবা-মাকে বের করে নিয়ে যায়। এর ফলে তাঁদের কয়েক জন জখম হন। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দীপকের দেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার পরপরই মৃত্যু হয় জখম কর্মী রঞ্জিৎবাবুর। তাঁর বাড়ি দুর্গাপুরের ৫৪ ফুট এলাকার তপোবন অঞ্চলে। তিনি জুনিয়র টেকনিসিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সেল চেয়ারম্যান বুধবার জানিয়েছিলেন, জখমদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ সেল বহন করবে। মৃতের পরিবারকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। আইএনটিইউসি-র পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়, দুর্ঘটনার তদন্তে অন্য ইস্পাত কারখানা থেকে উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদের নিয়ে কমিটি গড়তে হবে। ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেেলর চেয়ারম্যান ডিএসপি-র গড়া দুই সদস্যের কমিটি ভেঙে চার সদস্যের একটি কমিটি গড়েছেন। তাতে রয়েছেন ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের ইডি (ওয়ার্কস) আর কে রাঠি, বোকারো স্টিল প্ল্যান্টের ইডি (ওয়ার্কস) অরূপণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সেলের জিএম (কর্পোরেট অফিস, দিল্লি) সঞ্জীব তানিজা এবং জিএম, মেকন পি কে পল্লে। এই ঘটনার জন্য ডিএসপি-র জিএম (সেফটি) অমিত বিশ্বাস এবং ডিজিএম (ইনচার্জ, সিসিপি) পি কুমারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
আইএনটিইউসি-র দাবি, কর্মীর মৃত্যুর পরে আইন মোতাবেক স্ত্রী বা সন্তানের চাকরি পাওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষানবীশ কর্মীর স্ত্রী-সন্তান না থাকায় তাঁর পরিবার চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই আইন বদলের দাবিতে সেলের চেয়ারম্যানের অফিসে শিক্ষানবীশ কর্মীদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে আইএনটিইউসি। সংগঠনের নেতা দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রয়োজন অনুযায়ী আইন পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা দরকার। আমরা সেই দাবিতেই আন্দোলন করব।’’