এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, এ ভাবেই চলে অবৈধ খনন। জামুড়িয়ায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
কখনও আগুন, ধোঁয়া। কখনও বা অভিযানে গিয়ে সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীদের হেনস্থার মুখে পড়া। অবৈধ খননের জেরে এমন নানা ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে সামনে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে কয়লা মন্ত্রক অবৈধ খনন রুখতে ভরসা রাখছে নাগরিকদের পাঠানো ‘খবরে’। আর সেই খবর আসবে ‘খনন প্রহরী’ নামের অ্যাপের মাধ্যমে।
কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ জানান, কোথায়, কখন, কী ভাবে অবৈধ খনন চলছে সেই খবর ছবি-সহ পাঠানো যাবে অ্যাপের মাধ্যমে। তবে খবরদাতার পরিচয়, ঠিকানা বা তাঁর সংক্রান্ত অন্য তথ্য সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।
জেলার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং বাসিন্দারা একাধিক বার অভিযোগ করেছেন, রানিগঞ্জের তৃপ্তিগড়িয়া, হাড়াভাঙা, রতিবাটি স্টাফ কোয়ার্টার, বক্তারনগর গ্রাম, নারায়ণকুড়ি, জামুড়িয়ার শ্রীপুর, আসানসোল দক্ষিণের কাল্লা, বারাবনি, অণ্ডালের কাজোড়া লাগোয়া জেকে রোপওয়েজের কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের অদূরে রীতিমতো মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে অবৈধ খোলামুখ খনি চলছে। রয়েছে কয়েক হাজার কুয়ো খাদও। কিন্তু নাগরিকদের একাংশের আক্ষেপ, অভিযোগ উঠলেও তার খবর বোধহয় অনেক সময়েই কানে পৌঁছয় না কয়লা মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের। এই পরিস্থিতিতে অবৈধ কয়লার কারবার রোখার অভিযানেও গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
খনন প্রহরী
উদ্যোগ, কয়লা মন্ত্রকের
ডাউনলোড করা যাবে ‘গুগল প্লে স্টোর’ থেকে
খবর পেয়ে ভরাট করা হয়েছে শতাধিক খনি
ইসিএলের সাঁকতোড়িয়া কার্যালয় থেকে নজর
গোপন থাকবে সংবাদদাতার পরিচয়, ঠিকানা
ইসিএল সূত্রে জানা যায়, এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরের গোড়ায় কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের উপস্থিতিতে দিল্লিতে এক বৈঠকে কোল ইন্ডিয়ার আধিকারিকেরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে কয়লা চুরি আটকানোর প্রস্তাব দেন। তখনই অ্যাপ চালু করা হবে বলে ঠিক হয়। ৭ জুলাই অ্যাপের উদ্বোধন হয় দিল্লিতে।
কী রয়েছে এই অ্যাপে? ‘গুগল প্লে স্টোর’ থেকে ‘খনন প্রহরী’ ‘ডাউনলোড’ করা যাবে। সেখানে অভিযোগ জানানো (‘কমপ্লেন’), অভিযোগ কী অবস্থায় রয়েছে (‘ট্র্যাক ইওর স্টেটাস’), খনি মানচিত্র-সহ বেশ কিছু বিভাগ রয়েছে। ছবি-সহ অভিযোগ জানানো যাবে ‘কমপ্লেন’ ঘরে গিয়ে।
ইসিএল কর্তারা জানান, সাঁকতোড়িয়া কার্যালয়ে নিরাপত্তা বিভাগের অধীনে একটি গোপন ঘর তৈরি করা হয়েছে, যেখানে একাধিক কম্পিউটারে ‘অ্যাপ’ মারফত নিয়মিত খবর আসছে।
অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়েই আধিকারিকেরা প্রথমে অবৈধ খনন এলাকা চিহ্নিত করছেন। তার পরে সিআইএসএফ ও সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধ খনন রুখতে চলছে অভিযান। তবে এখানে ইসিএল ছাড়াও কোল ইন্ডিয়ার অন্য শাখা-সংস্থাগুলির এলাকারও খবর মিলছে।
ইসিএলের সিএমডির কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের কথায়, ‘‘অ্যাপ থেকে খবর পেয়ে অবৈধ খনন রোখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাফল্য মিলেছে। সংবাদদাতার নাম, পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে।’’ এ যাবৎ ১১টি অবৈধ খনি এলাকায় অভিযান করে প্রায় শতাধিক খনি ভরাট করা হয়েছে বলে ইসিএল কর্তারা জানান। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কয়লা কাটার নানা যন্ত্র, কয়েকশো টন চোরাই কয়লা।
আধিকারিকেরা জানান, ইসিএল এলাকায় প্রথম খবর আসে গত ৩ অগস্ট ঝাড়খণ্ডের মুগমা থেকে। তার পরে জামুড়িয়ার কেন্দা, শ্রীপুর ও চাঁদা, কুলটির সোদপুর, সালানপুরের ডাবর, বারাবনি-সহ নানা এলাকা থেকে খবর মেলে। সেই মতো অভিযানও চালানো হয়।
ইসিএল কর্তাদের আশা, এত দিন নানা অভিযান চালিয়েও যে সাফল্য মেলেনি, এ বার তাই হয়তো মিলবে অ্যাপের মাধ্যমে।