আদালতের পথে ধৃতরা। নিজস্ব চিত্র।
‘জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। কাগজ কোথায়?’— শুনেই খানিক থতমত লরির চালক। চেয়ে দেখেন রাস্তার পাশে রয়েছে নীল বাতি ও পুলিশের বোর্ড লাগানো গাড়ি। শেষমেশ দু’হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে তবে মিলল নিষ্কৃতী। অভিযোগ, শুক্রবার রাতে বর্ধমানের নবাবহাট এলাকায় এ ভাবেই সেলস ট্যাক্স অফিসার পরিচয় দিয়ে ‘তোলা’ তুলছিল ওই চার ব্যক্তি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই চার জনকেই হাতেনাতে পাকড়াও করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চার ব্যক্তি বর্ধমান-সিউড়ি রোডের মোড়ে দাঁড়িয়েছিল। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। দোকানপাটের ঝাপও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই সুযোগে ওই চার জন কোনও মালবাহী ট্রাক, লরি, ম্যাটাডোর দেখলেই তা থামাচ্ছিল বলে অভিযোগ। তারপরে নিজেদের ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে দাবি করছিল, তারা ‘সেলস ট্যাক্সের অফিসার।’ তারপরে রীতিমতো ঝানু অফিসারের কায়দায় শুরু একের পরে এক কাগজপত্র পরীক্ষা। সঙ্গে গাড়ির চালকদের একের পর এক প্রশ্ন। শেষমেশ চালকদের কাছে থেকে এক বা দু’হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল বলে পুলিশের দাবি।
কী ভাবে পুলিশের জালে পড়ল এই চার জন? বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, আচমকা খবর মেলে নবাবহাটে গাড়ি আটকে তোলা তুলছে কয়েক জন। এরপরেই ওই এলাকায় হানা দেয় পুলিশ। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় চার মূর্তির কীর্তি। ‘কে আপনারা?’ পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে ওই চার জন জানায়, তারা সেলস ট্যাক্সের অফিসার। কিন্তু ওই চার জনের সঙ্গে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি দেখেই সন্দেহ হয়। দ্যুতিমানবাবু বলেন, ‘‘বর্ধমানে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে যে কটি গাড়ি চলে তার সবকটিই চেনা। সন্দেহ হওয়ায় ওই ব্যক্তিদের জেরা করা শুরু হয়। সদুত্তর না মেলায় বর্ধমান থানায় নিয়ে এসে ওদের গ্রেফতার করা হয়।’’ পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম, সৌভিক কুমার সরকার, মহম্মদ আয়ুব, বুধু সিং ও অমিত যাদব। সৌভিক ও বুধুর বাড়ি হুগলির পাণ্ডুয়ায়। আয়ুব কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকার ১১৪/১ কলোনি স্ট্রিট এবং অমিত কলকাতার মানিকতলা মেন রোড এলাকার বাসিন্দা।
বর্ধমান থানার পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি কলকাতার লালবাজারে ভাড়া খাটানো হয়। ওই গাড়ির চালকের বাড়ি পাণ্ডুয়াতে। গ্রেফতার হওয়া সৌভিক ও বুধুও একই এলাকার বাসিন্দা। দু’টি ক্ষেত্রে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শনিবার ধৃতদের ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হলে ২ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।