হামলাকারীদের ধরার দাবিতে মিছিল বেগপুরে। নিজস্ব চিত্র
এক তৃণমূল নেতাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল কালনা ১ ব্লকের বেগপুরে। সোমবার রাতে ইনসান মল্লিক নামে ওই নেতার উপরে দুষ্কৃতী হামলা হয়। তিনি কালনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাস খানেক আগে এই ব্লকেরই সুলতানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের সুকুর শেখ এবং এক দলীয় কর্মীকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের অন্তর্কলহের জেরেই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ মানেননি তৃণমূল নেতৃত্ব।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবার রাত আটটার কিছু পরে ইনসান বেগপুরের গদারপাড়ের দলীয় কার্যালয় থেকে মোটরবাইকে কাছেই রাজখাড়া গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। পুলিশের কাছে আহত নেতা দাবি করেছেন, বাড়ির কিছুটা আগে মসজিদের সামনে একটি গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মেরে বাইক থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। কোনওরকমে নিজেকে সামলে নিতেই গাড়ির ভিতর থেকে দু’জন মুখোশধারী দুষ্কৃতী বেরিয়ে আসে। এক জন রিভলভারের বাঁট দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে। দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ইনসানের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে হলে রিভলভার মাটিতে পড়ে যায়। ইতিমধ্যে ইনসানের চিৎকারে আশপাশের লোকজন রাস্তার কাছে আসতে শুরু করে। তখনই গাড়ি ছুটিয়ে দুষ্কৃতীরা চৌঘরিয়া এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায় বলে ইনসানের দাবি।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি রিভলভার ও মুখোশ উদ্ধার করে। আহত নেতাকে ভর্তি করা হয় মহকুমা হাসপাতালে। মঙ্গলবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ইনসান কালনা থানার ওসি প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান, ওই গাড়িতে ছিল চার দুষ্কৃতী। গাড়ির চালককে দেখলে তিনি চিনতে পারবেন। হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালে বহু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক হাজির হয়ে যান। আহত নেতার সঙ্গে দেখা করেন দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। সকালে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয় ইনসান মল্লিককে। তার আগে তাঁর অনুগামীরা হাসপাতাল থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মিছিল করেন।
কেন এই হামলা, সে নিয়ে অবশ্য শাসকদলের নেতা বা কর্মীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, শুধু বেগপুর নয়, আশপাশের সুলতানপুর, কাকুঁরিয়া বা সিমলন-আটঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকাতেও প্রভাব রয়েছে ইনসানের। ওই সব এলাকায় পঞ্চায়েতের ভোটের মাস ছয়েক আগে থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচড়া দিয়েছে। ভোটের আগে নিহত সুকুর শেখও ছিলেন ইনসানের ঘনিষ্ঠ। কালনার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘ওই সব এলাকায় চাপা উত্তেজনা থাকায় ইনসান মল্লিককে সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরোতেও বারণ করা হয়েছিল।’’
বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিকের দাবি, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠী কলহ কালনা ১ ব্লকের পঞ্চায়েতগুলিতে মাত্রা ছাড়িয়েছে। তার জেরেই নানা দুষ্কর্ম ঘটছে।’’ যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপনবাবু বলেন, ‘‘দলে কোথাও কোনও কলহ নেই। সোমবারের ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’’ এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।