মন্দিরে আজও রাখা দু’জনের লেখার টেবিল

শ্মশানের মন্দিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতেন কাজী নজরুল ইসলাম। সেখানেই তিনি ‘শ্মশানে জাগিছে শ্যামা’ লিখেছিলেন, মনে করেন অনেকে। শ্মশান বিলুপ্ত হয়েছে, কিন্তু রানিগঞ্জের বড়বাজারে শ্মশান কালীবাড়ির পুজো ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৮
Share:

রানিগঞ্জের শ্মশান কালীবাড়ি।

শ্মশানের মন্দিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতেন কাজী নজরুল ইসলাম। সেখানেই তিনি ‘শ্মশানে জাগিছে শ্যামা’ লিখেছিলেন, মনে করেন অনেকে। শ্মশান বিলুপ্ত হয়েছে, কিন্তু রানিগঞ্জের বড়বাজারে শ্মশান কালীবাড়ির পুজো ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

Advertisement

জনশ্রুতি রয়েছে, ১২১২ বঙ্গাব্দে বক্তারনগর গ্রামের তারাশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় এই মন্দিরে সিদ্ধিলাভ করেন। তার পর থেকে ওই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যেরাই সেবাইতের কাজ করে আসছেন। আসানসোল বাংলা অ্যাকাডেমির সভাপতি তথা রানিগঞ্জের বাসিন্দা রামদুলাল বসু জানান, ওই পরিবারের বৈদ্যনাথ চট্টোপাধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুখপত্র ‘তরুণ’ পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। বৃটিশ আমলে পত্রিকাটি নিষিদ্ধও হয়ে যায়। তখন নজরুল সিহারশোল রাজ হাইস্কুলে ও লেখক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় রানিগঞ্জ হাইস্কুলে পড়তেন। তাঁরা বন্ধু ছিলেন। কথিত রয়েছে, শ্মশানে কালীমন্দিরে বৈদ্যনাথবাবুর পত্রিকা অফিসে তাঁদের যাতায়াত ছিল। সেখানে তাঁরা যে টেবিলে লেখালেখি করতে সেটি মন্দিরেই রাখা আছে।

বৈদ্যনাথবাবুর ভাইপো তথা বর্তমান সেবাইত অসিত চট্টোপাধ্যায় জানান, পরিবার সূত্রেই জেনেছেন নজরুল, শৈলজানন্দ ও তাঁর জ্যাঠামশাইয়ের সম্পর্ক মধুর ছিল। তাঁরা এই মন্দিরে আড্ডা দিতেন। নজরুল মন্দির নিয়ে একটি ছড়াও লেখেন। অসিতবাবু জানান, তাঁদের ধারণা, এই মন্দিরই পরে কবির শ্যামাসঙ্গীতের প্রেরণা হয়ে উঠেছিল।

Advertisement

এই মন্দির বড়বাজারে বড়কালী মন্দির হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেই গাছে ঘেরা শ্মশান এখন শহরের ব্যস্ত এলাকা। তবে একই রেওয়াজ বজায় আছে। এখনও শ্মশানকালী হিসেবেই নিত্যপুজোর আয়োজন হয়। মূর্তি তৈরি হয় প্রতি বছর। মহালয়ায় দেবী মূর্তি বির্সজন দেওয়া হয়। তার পরে নতুন মূর্তি তৈরি শুরু হয়। কালীপুজোর দিন সেই মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়। মহালয়ার দিন থেকে কালীপুজোর আগের দিন পর্যন্ত মায়ের পুজো হয় ঘট ও পটে। অসিতবাবু বলেন, “নজরুল গবেষকরা এই মন্দির নিয়েও গবেষণা করুন।’’

জামুড়িযার ইকড়ার প্রাচীন শ্মশানকালী মন্দির বামাখ্যাপার স্মৃতি বিজড়িত। কথিত রয়েছে, বিনা টিকিটে বামাখ্যাপা ট্রেনে চেপে বৈদ্যনাথধাম যাচ্ছিলেন। ইকড়া স্টেশনের কাছে টিকিট পরীক্ষক তাঁকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিতে ট্রেন চলা বন্ধ হয়ে যায়। বামাখ্যাপা সেখান থেকে ইকড়ার শ্মশানে গিয়ে বসেন। শোনা যায়, ট্রেনের গার্ড সাধককে চিনতেন। তিনি টিকিট পরীক্ষককে জানান, সাধককে ট্রেনে না চাপানো পর্যন্ত চাকা ঘুরবে না। এর পরে সাধককে শ্মশান থেকে নিয়ে গিয়ে ট্রেনে চাপানো হয়। এখন ইকড়ায় ওই শ্মশান অব্রাহ্মণদের বলে পরিচিত। ইকড়ায় ব্রাহ্মণদের শ্মশান ও প্রয়াত অজিত বাউরির উদ্যোগে চালু একটি পুজো হয়।

রানিগঞ্জের বল্লভপুর শ্মশান কালী মন্দিরের পুজো শতাব্দী প্রাচীন। কালীপুজোর দিন ভিড় উপচে পড়ে। পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রায় শ্মশান কালীমন্দিরে পুজো হচ্ছে প্রায় ২০ বছর ধরে। বালানপুর, চাঁদা, বারবানির নুনী, কল্যাণপুর শ্মশান কালীবাড়ির পুজোগুলিও নজরকাড়া। নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন