—প্রতীকী ছবি।
স্কুলছাত্রীকে পাচার, বিক্রি এবং ধর্ষণের মামলায় আদালতে ধাক্কা খেল সিবিআই। কলকাতা হাই কোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখল পকসো আদালত।
পূর্ব বর্ধমানের রায়নাকাণ্ডে দুই অভিযুক্তের জামিন বাতিলের জন্য সিবিআইয়ের তরফে বর্ধমানের পকসো আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। যুক্তি হিসাবে সিবিআই বলে, মামলাটি অপহরণের ধারা দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে পাচার এবং তফসিলি আইনের ধারা যুক্ত করা হয়। কিন্তু পরে তদন্তে জানা যায়, অপহৃতা ছাত্রীকে বেশ কয়েক বার ধর্ষণ করা হয়েছে। নাবালিকা জেনেও তার বিয়ে দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে পকসো এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের ধারাও যোগ হয়েছিল। তার আগেই অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যান। অথচ ওই দু’জনের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ এবং পাচারে জড়িত থাকার বিষয়ে বহু তথ্য রয়েছে। দু’জনই গুরুতর অপরাধ করেছেন। তাই তাঁদের জামিন খারিজ করা হোক।
পাল্টা অভিযুক্তদের আইনজীবী নিলয় চোঙদার তাঁর সওয়ালে জানান, কলকাতা হাই কোর্ট তাঁর মক্কেলদের জামিন মঞ্জুর করেছে। তাঁরা নির্দেশ মাফিক নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। তাঁদের ভালে ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেই উচ্চ আদালত জামিন দিয়েছে। তা ছাড়া, সিবিআই তদন্তভার নেওয়ার পরেও দু’জনকে হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেনি। দু’জনের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের প্রভাবিত করা বা ভীতি প্রদর্শনেরও কোনও অভিযোগ নেই।
দুই পক্ষের সওয়ালের পরে পকসো আদালতের বিচারক দেবশ্রী হালদার সিবিআইয়ের আবেদন খারিজ করে দিয়ে অভিযুক্তদের জামিন বহাল রাখেন। তবে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্তেরা তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সিবিআইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আগামী ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।
আদালত সূত্রে খবর, ২০২৩ সালের ৯ অগস্ট রায়না থানা এলাকার বাসিন্দা এক ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়। সিবিআইয়ের দাবি, সে বছরের ৬ অগস্ট সন্ধ্যায় নিখোঁজ হয় ছাত্রীটি। মোবাইলে কথা বলা নিয়ে অভিভাবকেরা বকাবকি করেছিলেন তাকে। অভিমানে বাড়ি ছাড়ে সে। তার পর মেয়েটি আর বাড়ি ফেরেনি। ছাত্রীর মা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। তার ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়। পরে ওই ঘটনার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। তারা চার্জশিটে জানায়, দুই ব্যক্তি ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেন। ২০২৩ সালের ৭ অগস্ট ছাত্রীকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেন তাঁদের একজন।
সিবিআই জানায়, প্রথমে ছাত্রীটিকে আসানসোলে নিয়ে গিয়ে সাবালক দেখিয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। তার পর তাকে রাজস্থানে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখানে আবার তার বিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে আবার একাধিক ব্যক্তি মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। ওই গোটা ঘটনায় মহিলা পাচারচক্র জড়িত বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
চলতি বছরের অগস্টে রাজস্থান থেকে অপহৃতাকে উদ্ধার করা হয়। তদন্তে নেমে দুই অভিযুক্ত ছাড়াও আরও ১২ জনকে গ্রেফতার হন।