bardhaman university

ফাঁকা উপাচার্যের পদ, সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে

কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, চলতি সপ্তাহের মধ্যে উপাচার্য পদে কেউ না এলে বেতন আটকে যাওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫১
Share:

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

গত ১৯ দিন ধরে উপাচার্য পদ ফাঁকা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে কারণে শিক্ষা ও অর্থনৈতিক নানা কাজ আটকে রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের দাবি।

Advertisement

কর্মীদের একাংশের আশঙ্কা, চলতি সপ্তাহের মধ্যে উপাচার্য পদে কেউ না এলে বেতন আটকে যাওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, উপাচার্য পদে কাকে নিয়োগ করতে পারেন রাজ্যপাল তথা আচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের মাধ্যমে একটি বিষয়ের প্রধান ও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষক রাজভবনে এক আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে সূত্রের খবর। যদিও এ নিয়ে কোনও পক্ষ সরাসরি মুখ খুলতে চাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশিস পাণিগ্রাহী বলেন, ‘‘উপাচার্য না থাকায় সমস্যা তো হচ্ছেই। সহ-উপাচার্য হিসেবে যতটা কাজ করা যায়, তা করা হচ্ছে।’’

Advertisement

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিমাই সাহার মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়েছিল। তা শেষ হওয়ার পরে, নানা টানাপড়েন শেষে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষকে অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মাসখানেকের মধ্যে, ৩০ জুন তিনি অবসর নেন। তার পরে ১৯ দিন কেটে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় অস্থায়ী ভাবে উপাচার্য পায়নি। শিক্ষক থেকে শিক্ষাকর্মী, অনেকেই মনে করছেন, এমন অবস্থা বেশি দিন চললে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা শুরু হয়ে যাবে।

স্থায়ী উপাচার্য বাছার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে বলে বিকাশ ভবন সূত্রের খবর। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ নানা বিভাগের দৈনন্দিন কাজে সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হচ্ছে। সূত্রের খবর, স্নাতক স্তরের খাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই (স্পট মূল্যায়ন) দেখা হয়। সে জন্য বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়। সেই টাকার অনুমোদন আগে থেকে উপাচার্যের কাছে নিয়ে থাকে পরীক্ষা নিয়ামক দফতর। চলতি মাসে সেই পরীক্ষা নিয়ে ৩১ অগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত ফল বার করতে হবে।

পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মোটা টাকা প্রয়োজন। কী ভাবে তা হবে বুঝতে পারছি না। ৩১ অগস্টের মধ্যে ফল না বেরোলে পড়ুয়ারা উচ্চশিক্ষায় সুযোগ পেতে সমস্যায় পড়বে।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের দাবি, ছাত্র ভর্তি থেকে পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম একাধিক পোর্টালের মাধ্যমে হয়। সেই সব পোর্টালের কাজ দেখাশোনা করে একটি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। তাদের পাঁচ কোটি টাকার বেশি পাওনা আটকে রেখেছিল বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বজিৎবাবু এক মাসের মধ্যে দু’কোটি টাকা মেটানোর ব্যবস্থা করেন। বাকি টাকার জন্য ফের 'চাপ' আসছে।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ এখন খালি থাকায় পিএইচডি থেকে স্নাতক স্তর পর্যন্ত সব বিভাগেই জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তার দাবি, ‘‘পরিবার অভিভাবকহীন হলে সবাই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। টাকার অভাবে কাজ আটকে যায়। নতুন কাজ বা সিদ্ধান্ত নিতে কেউ এগোতে চায় না। এই সব সমস্যাই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।’’ চলতি শিক্ষাবর্ষেই চার বছরের স্নাতক চালুর প্রক্রিয়া চলছে। উপাচার্য না থাকায় অসুবিধায় সে প্রক্রিয়াও আটকে বলে সূত্রের খবর।

পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম ও হুগলির ৬৪টি কলেজ, একাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। এক অধ্যক্ষের দাবি, ‘‘এগজ়িকিউটিভ কমিটির বৈঠক না হওয়ায় অনেকগুলি কলেজের আবেদনও আটকে আছে।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী বলেন, ‘‘আশা করা হচ্ছে, শীঘ্রই ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের নাম রাজভবন থেকে জানানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন