বাড়ল দিন, তবু কাটল না আশঙ্কা

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৬৬টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৮৫টি এবং জেলা পরিষদে ১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা। তবে সিপিএম মেমারি, ভাতার, খণ্ডঘোষ, রায়নার মতো বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থী দেওয়ার জন্য তৈরি বলে দাবি করেছিল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩১
Share:

মেমারিতে বিজেপি-র র‌্যালিতে মোটরবাইক নজরে পড়েছে বলে দাবি পুলিশের। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

দিন বেড়়েছে, কিন্তু তার পরেও আশঙ্কা কাটছে না বিরোধীদের।

Advertisement

শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে আরও এক দিন। কিন্তু তার পরেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিরোধী দলগুলি। তাদের আশঙ্কা, এ ক্ষেত্রেও আগের মতোই তৃণমূলের সন্ত্রাসের মুখে পড়তে হবে। তবে সিপিএম, বিজেপি-র দাবি, এই পরিস্থিতিতেও তারা প্রার্থী দেওয়ার জন্য তৈরি।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৬৬টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৮৫টি এবং জেলা পরিষদে ১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তারা। তবে সিপিএম মেমারি, ভাতার, খণ্ডঘোষ, রায়নার মতো বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থী দেওয়ার জন্য তৈরি বলে দাবি করেছিল। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বর্ধমানে জেলাশাসকের দফতরের সামনেই যে রকম খণ্ডযুদ্ধ বেঁধেছিল তৃণমূলের সঙ্গে, সেই ঘটনা ফের যে ঘটবে না, তা নিয়ে আদৌ সংশয় কাটেনি সিপিএমের। দলের জেলার শীর্ষ নেতারা এই মুহূর্তে হায়দরাবাদে পার্টি কংগ্রেসে রয়েছেন। সেখান থেকেই সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, ‘‘এখনই কিছু বলছি না। হাইকোর্টের রায় আগে দেখি। তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে সিপিএমের কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক তথা জেলা কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, ‘‘মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আমরা তৈরি। তবে রায় খুঁটিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।’’ সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন বাড়লেও সে ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে প্রশাসনকে।

Advertisement

প্রায় একই বক্তব্য বিজেপি-রও। গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৯৭টি, পঞ্চায়েত সমিতিতে ২০১টি এবং জেলা পরিষদে ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। বিজেপি-র সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দী বলেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে এখানে ‘উন্নয়ন’ মানে লাঠি, বোমা। আমাদের অভিজ্ঞতা, তৃণমূল প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দিয়েছে। আমরা নতুন করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছি। কিন্তু আমাদের প্রার্থীদের ফের আটকানো হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়।’’ বিজেপি-র তরফে জানা গিয়েছে, তারা পূর্বস্থলী, কালনা থেকে রায়না, আউশগ্রামের সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য ঝাঁপাবেন।

কিন্তু গ্রামে গ্রামে মোটরবাইক বাহিনীর দাপট, বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি, প্রশাসনিক দফতরে ‘পাহারা’-র মতো শাসক দলের নানা ‘কৌশলে’র সামনে প্রশাসন আদৌ ‘নিরাপত্তা’ দেবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন বিরোধী নেতৃত্ব। বিজেপি নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা, কিছু দিন আগেই কাটোয়ায় মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বিজেপি প্রার্থীদের বাধা দেয় তৃণমূল। এমনকী এক বিজেপি নেত্রীকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এ সব ক্ষেত্রেই যথেষ্ট পুলিশি ব্যবস্থা থাকলেও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ বিরোধীদের। এই মুহূর্তে প্রশাসন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কাটোয়া মহকুমার পাঁচটি পঞ্চায়েত সমিতির মোট ১৩৪টি আসনে এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩৫টি আসনের একটিতেও প্রার্থী দিতে পারেন বিরোধী দলগুলি। জেলা পরিষদের মাত্র দু’টি আসনে বিজেপি এবং তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল এসইউসি। তার মধ্যেও দু’জন প্রার্থী আদালতের নির্দেশে ভোট-প্রক্রিয়া স্থগিত করার অন্তর্বর্তিকালীন নির্দেশের আগেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। মহকুমার এই ছবি আদৌ বদলানো সম্ভব কি না, তা নিয়েও সংশয়ে বিরোধীরা। মেমারিতে এ দিন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও অভিযোগ করেছেন, ‘‘পরিবর্তনের সূচনা পঞ্চায়েত ভোট থেকেই শুরু হবে। তা বুঝেই তৃণমূল আমাদের মনোনয়ন-প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়েছে।’

তবে সন্ত্রাসের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল জানিয়েছে, গোটা বিষয়টা আদালত ও প্রশাসনের। তৃণমূলের দাবি, বিরোধীরা যাতে মনোনয়ন দিতে পারে, তার জন্য জেলা প্রশাসন ব্লক ও মহকুমা অফিসে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। এ বারেও তেমনই নিরাপত্তা থাকবে বলেই ধারণা তাঁদের। তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘বিরোধীরা প্রার্থী পাচ্ছেন না বলেই অকারণে এ সব আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।’’

জেলা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ আসামাত্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোথাও কোনও জমায়েত হলে প্রশাসন দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী-প্রার্থী তালিকা আদৌ বাড়ে কি না, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে সব পক্ষেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন