গাড়িতে আগুন,ফাটল বোমা

২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে আমরাসোঁতা পঞ্চায়েতের পাঁচটি সংসদের চারটিতেই জেতে সিপিএম। এ বারে ওই পাঁচটি আসনেই লড়াই হচ্ছে তৃণমূল, সিপিএমের। চারটি সংসদে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরাও।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০২:৪৪
Share:

দাউদাউ: আমরাসোঁতায় জ্বলছে গাড়ি। সোমবার দুপুরে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

প্রথমে বুথ দখলের চেষ্টায় বোমাবাজির অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার পরে দু’দফায় সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে গোলমাল এবং শেষমেশ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটল রানিগঞ্জের আমরাসোঁতায়। সিপিএম সমর্থকদের দাবি, আগুনে ওই গাড়িতে থাকা বোমাগুলি ফাটতে থাকে। সিপিএমের দাবি, এলাকাবাসী সন্ত্রাস প্রতিরোধ করায় প্রায় সুষ্ঠু ভাবে ভোট হয়েছে।

Advertisement

২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটে আমরাসোঁতা পঞ্চায়েতের পাঁচটি সংসদের চারটিতেই জেতে সিপিএম। এ বারে ওই পাঁচটি আসনেই লড়াই হচ্ছে তৃণমূল, সিপিএমের। চারটি সংসদে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরাও।

সোমবার সকাল থেকেই নানা বুথে ভিড় জমান ভোটারেরা। এলাকাবাসী জানান, সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ গোলমাল শুরু হয় বাঁশড়ায় প্রাথমিক স্কুলের বুথে। সিপিএমের অভিযোগ, আচমকা দেখা যায়, বুথের বাইরে কয়েকটি গাড়ি ও মোটরবাইক থেকে নেমে প্রায় জনা তিরিশ অপরিচিত লোক বোমাবাজি শুরু করে। ছত্রভঙ্গ হয়ে যান ভোটারেরা। প্রাণ বাঁচাতে কাউকে কাউকে স্কুল ভবনের পাঁচিল টপকে পালাতেও দেখা যায়। ঘটনাস্থলে থাকা জনা কুড়ি পুলিশকর্মী গোলমাল না থামিয়ে স্থানীয় তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ সিপিএমের। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামেরই বাসিন্দা, কয়েকশো সিপিএম কর্মী-সমর্থক লাঠি ও তির-ধনুক হাতে তাড়া করেন ওই তিরিশ জনকে। গাড়ি, মোটরবাইকে চড়ে চম্পট দেয় তারা। মিনিট ১৫-র মধ্যে ফের ভিড় জমান ভোটারেরা।

Advertisement

এর পরে আর এলাকা ছাড়েননি সিপিএম সমর্থকেরা। সিপিএমের দাবি, দুপুর ১টা নাগাদ দেখা যায়, অদূরেই জঙ্গলের পথ দিয়ে একটি কালো রঙের গাড়িতে চড়ে সাত-আট জন লোক আসছে। ‘গাড়িতে বোমা আছে’, সিপিএম কর্মীরা এই অভিযোগ করার পরেই তাঁদের সঙ্গে বচসা বাধে তৃণমূল কর্মীদের। সিপিএম সমর্থকদের বারবার বলতে শোনা যায়, ‘‘তৃণমূল গাড়ি নিয়ে এসেছে। ওতে বোমা আছে।’’ সিপিএমের অভিযোগ, সেই সময়েই শূন্যে গুলি ছোড়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটিকে ঘিরে ফেলেন সিপিএম সমর্থকেরা। কোনও রকমে চম্পট দেন গাড়িতে থাকা লোকজন। মুহূর্তের মধ্যে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ওই গাড়িতে। সিপিএমের দাবি, খানিক বাদেই গাড়িতে থাকা বোমা ফাটতে শুরু করে। যদিও ঘটনাস্থলে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক রানিগঞ্জের ওসি প্রমিত গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বোমা নয়, টায়ার ফাটছে।’’

যদিও গোলমালের দায় তৃণমূল, সিপিএম, কেউই নিতে চায়নি। পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মী হেমব্রমের স্বামী সঞ্জয়বাবুর অভিযোগ, ‘‘মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরে আমার এবং দলের দু’জনের নামে তৃণমূল পুলিশে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তখনই বুঝতে পারি, ভোটে শাসক দলের সন্ত্রাসের পরিকল্পনা করেছে। গাড়িতে যে ভাবে বোমা ফাটল, তাতে সেই পরিকল্পনা প্রমাণিত হয়েছে।’’ তবে তৃণমূলের রানিগঞ্জ (গ্রামীণ) ব্লক সভাপতি বাবু রায়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘সিপিএমের লোকজন তির-ধনুক নিয়ে গাছে উঠে বসেছিল। ওই পঞ্চায়েতে লাল দুর্গ এখনও ভাঙা যায়নি। তাই যা সন্ত্রাস, ওরাই করেছে। আমাদের কর্মী, সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে।’’

সিপিএম কর্মীরা জানান, পঞ্চায়েতের চারটি বুথে সুষ্ঠু ভাবে ভোট হলেও ঝাটিডাঙা বুথটি তৃণমূল দখল করে। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা বাদশা চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘এখানে তৃণমূলের সন্ত্রাস মানুষ প্রতিরোধ করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন