রায় হতেই পথে উচ্ছ্বাস, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও

পঞ্চায়েত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ‘জয়ী’ তকমা মেলেনি। ফলে আশঙ্কা ছিলই। শুক্রবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেই মিটল সেই অস্বস্তি। পঞ্চায়েত তিন স্তরের প্রার্থীদের দুপুর থেকেই দেখা যায় আবির খেলায় মাততে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৪
Share:

বর্ধমানের রাস্তায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েত ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ‘জয়ী’ তকমা মেলেনি। ফলে আশঙ্কা ছিলই। শুক্রবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেই মিটল সেই অস্বস্তি। পঞ্চায়েত তিন স্তরের প্রার্থীদের দুপুর থেকেই দেখা যায় আবির খেলায় মাততে। বিকেলে কিছু এলাকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা তাসা-ব্যান্ড নিয়ে রাস্তায় নামতেও দেখা যায়। আলোচনা শুরু হয়ে যায় পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির মাথায় কে বসবেন তা নিয়েও। কিছু জায়গায় আবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও দেখা গিয়েছে বলে তৃণমূলেরই দাবি।

Advertisement

জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা রায়নার তৃণমূল প্রার্থী উত্তম সেনগুপ্তর দাবি, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা প্রার্থীদের জেলা প্রশাসন জয়ী বলে ঘোষণা করে দিক। যত তাড়াতাড়ি এই ঘোষণা করা সম্ভব হবে, তত তাড়াতাড়ি বোর্ড গঠন করে আমরা মানুষের কাজ করতে পারব।’’

নির্বাচন কমিশনের হিসেবে রাজ্যের ৩৪ শতাংশ আসনে একতরফা মনোনয়ন দাখিল করেছে তৃণমূল। রাজ্যের হিসেবকে পিছনে ফেলে দিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি। তবে জেলা পরিষদের ভোটে রাজ্যের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান। জেলা নির্বাচন দফতরের হিসবে, পূর্ব বর্ধমানের ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩২৩৪টি আসনের মধ্যে ২১০৩টি আসনে তৃণমূল একতরফা মনোনয়ন দাখিল করেছে (৬৫ শতাংশ)। পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৮টি আসনের মধ্যে ৩৯৬টি আসনে ভোট হয়নি (৬৪ শতাংশ) ও জেলা পরিষদের ৫৮টি আসনের ১৭টিতে বিরোধীদের প্রার্থী ছিল না। অর্থাৎ জেলা পরিষদে ২৯ শতাংশ আসনে ভোট হয়নি। এই জেলার ২১ টি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, পূর্বস্থলী ও মেমারি ২ ব্লকে দলীয় হুইপকে অগ্রাহ্য করে প্রধান বা উপপ্রধান নির্বাচন করা হয়েছে। এ দিনই খণ্ডঘোষে দলীয় দফতর দখল নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল হয়। খণ্ডঘোষের পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি বাসবী রায় থানায় অভিযোগ করেন, তাঁর পার্টি অফিস দখল করতে এসেছিল দলেরই কয়েকজন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সাতগেছিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েত আবার ভোটাভুটি করে প্রধান, উপপ্রধান নির্বাচন করা হয়।

Advertisement

এ দিন রায় ঘোষণার পর আবির নিয়ে মেতে ওঠেন তৃণমূলের জেলা পরিষদের প্রার্থী নূরুল হাসান। তিনি বলেন, “অনেকটা হাল্কা লাগছে।’’ কাটোয়া মহকুমায় কোনওস্ত রেই একটি আসনেও ভোট হয়নি। সেখানকার অর্জুনডিহির বাবলু মোল্লা, কেতুগ্রামের তরুণ মুখোপাধ্যায়দের কথায়, “চাপা টেনশন তো ছিলই। সুপ্রিম কোর্টের রায়ই বলে দিল আমরা জনগণের সঙ্গে রয়েছি।’’

যদিও উচ্ছ্বাসকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি উদয় সরকার বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই, এ কথা সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণের মধ্যে বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে।’’ বিজেপির বর্ধমান সদরের সাংগঠনিক সভাপতি সন্দীপ নন্দীর কথায়, “এ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট অবাধ হয়নি, সেটা বারেবারে শুনানির সময় বিচারকরা জানিয়েছেন। লোকসভা ভোট যাতে অবাধ হয়, সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে।’’

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “রাজ্য নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ এলে শংসাপত্র ও প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন