বাস, পুলিশের গাড়িতে হামলা কাটোয়ায়

বাম নেতৃত্বের অবশ্য পাল্টা দাবি, ধর্মঘট সফল হওয়ার জন্যই পুলিশকে অতি সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৩
Share:

কাটোয়ার জাজিগ্রামে অবরোধকারীদের তাড়া। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাস ভাঙচুর থেকে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ— বিক্ষিপ্ত নানা অশান্তিতে ধর্মঘটের প্রথম দিন পেরোল পূর্ব বর্ধমানে। তবে মঙ্গলবার সার্বিক ভাবে ধর্মঘটের কোনও প্রভাব পড়েনি বলে পুলিশ-প্রশাসনের দাবি। বেশিরভাগ এলাকাতেই দোকানপাট খোলা ছিল। সচল ছিল অফিস-কাছারিও। বাম নেতৃত্বের অবশ্য পাল্টা দাবি, ধর্মঘট সফল হওয়ার জন্যই পুলিশকে অতি সক্রিয় ভূমিকা নিতে হয়েছে।

Advertisement

কাটোয়ায় গোলমাল

সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ কাটোয়ার সুবোধ স্মৃতি রোডে ঘোষহাটের একটি বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া নিয়ে যাওয়া বাস আটকান ধর্মঘট সমর্থকেরা। বাসের চালক তোতন দাস অভিযোগ করেন, বচসার পরে তাঁকে বাসে উঠে মারধর করা হয়। পুলিশ গিয়ে বাসটি স্কুলে পৌঁছে দেয়। তবে চালক কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের আবার দাবি, তাঁদের কোনও চালককে মারধর করা হয়নি।

Advertisement

সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কে জাজিগ্রামের সিপাইদিঘি মোড়ে বর্ধমান, বোলপুর, বহরমপুরগামী বাস আটকানোর চেষ্টা করেন বাম নেতা-কর্মীরা। ছিলেন কাটোয়ার প্রাক্তন বিধায়ক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলকোটের প্রাক্তন বিধায়ক শাজাহান চৌধুরী। পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে যায়। অভিযোগ, পুলিশের সামনেই কাটোয়া-বোলপুর একটি বাসের কাচ ভেঙে দেন ধর্মঘট সমর্থকেরা। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এর পরেই পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে। অভিযোগ, পুলিশের লাঠিতে চোট পান বাম কর্মীরা। ঘটনাস্থলে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়। গ্রেফতার করা হয় জনা দশেককে। তাঁদের ভ্যানে তোলার সময়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা বাধে অঞ্জনবাবুর। পুলিশকর্মীরা ধাক্কাধাক্কি করেছেন বলে অভিযোগ তাঁর।

গুসকরায় অশান্তি

গুসকরায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ সিপিএমের মিছিল এগোচ্ছিল স্টেশনের দিকে। পুলিশের গাড়ি টহল দিচ্ছিল। অভিযোগ, অবরোধকারীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের বড় বাহিনী পৌঁছয়। সিপিএমের অভিযোগ, স্টেশন রোডে অবরোধকারীদের উপর লাঠি চালায় পুলিশ। দলের গুসকরার নেতা মনোজ সাউয়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ আমাদের সাইকেল-মোটরবাইক ভাঙচুর করেছে। আমাদের খাওয়ার জায়গাতেও গিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে।’’ সিপিএম নেতা সুরেন হেমব্রম বলেন, ‘‘আমাদের অফিসের সামনে বাইক-মোটরবাইক ভাঙচুরে বাধা দিতে গেলে কয়েকজন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়।’’ পুলিশ যদিও লাঠি চালানো বা তাণ্ডবের কথা মানতে চায়নি।

জাতীয় সড়ক আটকে

পালশিটে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এবং ট্রেন অবরোধ করা হয়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির পরে অবরোধ উঠে যায়। সেই সময়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের একটি গাড়িতে চড়াও হন বিক্ষোভকারীরা। তবে সেটি ছেড়ে দেওয়া হয়। অবরোধের জেরে পালশিটে বেশ কিছুক্ষণ ধরে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন কলকাতা, দুর্গাপুর ও আসানসোলের যাত্রীরা। গলসির গলিগ্রামে জাতীয় সড়কের উপরে টায়ার-খড় জ্বালিয়ে অবরোধ করে সিপিএম। অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়।

অবরোধে দুর্ভোগ

সকালে বর্ধমানের পার্কাস রোডে সিপিএম অবরোধ করায় বাস-ট্রাকের সঙ্গে স্কুলবাসও আটকে পড়ে। কোনও গাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করলে চাকার হাওয়া খুলে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ তাড়া করলে অবরোধকারীরা কার্জন গেটে যান। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। তৃণমূল কর্মীরাও ধর্মঘট বিরোধিতায় আসরে নামেন। এর পরে অবরোধকারীরা চম্পট দেয়। মেমারির চকদিঘি মোড়েও অবরোধ হয়। পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ী নেতৃত্বে তা তোলা হয়। বর্ধমান-আরামবাগ রোডের সগড়াই মোড়ে অবরোধে ভোগান্তি হয় যাত্রীদের। বর্ধমান-হাওড়া মেন এবং কর্ড লাইনে সকালে রেল অবরোধ হওয়ায় ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কাটোয়ায় রেললাইনে মিনিট ছয়েক অবরোধ চলে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড়ে রেল অবরোধ হয়। ছিলেন সিপিএম নেত্রী অঞ্জু কর। একটি লোকাল ট্রেন আটকে ঘণ্টা দেড়েক চলে অবরোধ। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালেখাঁতলায় পথ অবরোধ হয় সিপিএম নেতা তথা পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক প্রদীপ সাহার নেতৃত্বে। অবরোধকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। একটি ট্রাকের কাচ ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। কালনার বৈদ্যপুর ও ধাত্রীগ্রামেও রাস্তা অবরোধ হয়। ধাত্রীগ্রামে রাস্তা অবরোধ চলে ঘণ্টা খানেক ধরে।

অফিস, বাজার সচল

সকালের দিকে কিছু জায়গায় বাজার-দোকান বন্ধ থাকলেও বেলা গড়াতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। অফিস-কাছারি খোলা ছিল। রাস্তায় নেমেছিল বাসও। কালনা ও কাটোয়ায় স্বাভাবিক ছিল খেয়া পরিষেবা। বর্ধমান, কাটোয়া-সহ বিভিন্ন শহরাঞ্চলের বাজারগুলিতে কেনাবেচা ছিল স্বাভাবিক। কাটোয়ায় কাছারি রোডে পূর্ত দফতরের কার্যালয় বন্ধ থাকায় দুপুর ১২টা নাগাদ খুলতে যায় পুলিশ। ওই দফতরের আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সকাল এসে দেখি, দরজায় ধর্মঘটের পোস্টার ঝুলছে। প্রশাসনকে জানাই। পুলিশ না আসা পর্যন্ত কর্মীদের দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে হয়।’’ কালনায় বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল। আদালতে আসেননি বেশির ভাগ আইনজীবী। অধিকাংশ ব্যাঙ্কই খোলা ছিল।

কর্তারা বলেন

জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ কোথাও লাঠি চালায়নি। অবরোধকারীরা ভাঙচুর চালিয়েছে। সে কারণে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর-হামলায় জেলায় ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের বক্তব্য, ‘‘ধর্মঘটের প্রভাব জেলায় পড়েনি। সরকারের নানা অনুষ্ঠান ছিল, সেখানে প্রচুর মানুষ এসেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাও সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে। সরকারি অফিসে একশো শতাংশ হাজিরা ছিল।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের অবশ্য পাল্টা দাবি, “বন্‌ধ সফল হয়েছে বলেই পুলিশ অতি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। কোথাও-কোথাও তার সঙ্গী হয়েছে তৃণমূল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন