হিন্দি-ভোটে নজর দিতেই সভা দুর্গাপুরে

বিজেপি সূত্রের দাবি, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে আসানসোল আসন জেতার ক্ষেত্রে এই হিন্দিভাষী বাসিন্দাদের ভোটের ভাল ভূমিকা ছিল। সে কারণে এ বার আগে থেকেই সে দিকে নজর রাখছে সব পক্ষ। এ রাজ্যে হিন্দিভাষী ভোটারদের কাছে পৌঁছতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন ধরেই সক্রিয়।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:০৫
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার আগে প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা ভোটের আগে লক্ষ্য এ রাজ্যের হিন্দিভাষী ভোটারদের মন জয় করা। সেই সঙ্গে আসানসোলের পাশাপাশি দুর্গাপুরেও দলের প্রভাব বাড়ানোর দিকে নজর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থল হিসেবে এ বার দুর্গাপুর শহরকে বেছে নেওয়ার পিছনে এমন কারণই রয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। তৃণমূলের অবশ্য পাল্টা দাবি, আসানসোলে বিজেপি-র আর ‘মুখ লুকনোর’ জায়গা না থাকায় দুর্গাপুরে সভা করতে হচ্ছে।

Advertisement

বিজেপি সূত্রের দাবি, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে আসানসোল আসন জেতার ক্ষেত্রে এই হিন্দিভাষী বাসিন্দাদের ভোটের ভাল ভূমিকা ছিল। সে কারণে এ বার আগে থেকেই সে দিকে নজর রাখছে সব পক্ষ। এ রাজ্যে হিন্দিভাষী ভোটারদের কাছে পৌঁছতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন ধরেই সক্রিয়। বিভিন্ন জায়গায় হিন্দিভাষীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। মাস কয়েক আগে জামুড়িয়ার সভায় তাঁর বক্তৃতার একটি বড় অংশ ছিল হিন্দিভাষীদের উদ্দেশে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘হিন্দুস্তানের একটাই জায়গা বাংলা, যেখানে বাঙালি ও হিন্দিভাষী এক সঙ্গে একজোট হয়ে থাকি। শুধু ভোটের জন্য বাঙালি-হিন্দি ভাগ বাটোয়ারা করি না।’’

আসানসোলে হিন্দিভাষী ভোটারের সংখ্যা ৪৫ শতাংশ। গত লোকসভা ভোটের আগে সেখানে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ের সমর্থনে সভা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিম বর্ধমানের বিজেপি নেতাদের অনেকেরই দাবি, আসানসোলের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার ব্যাপারে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। সেই সঙ্গে দুর্গাপুরেও দলের কার্যকলাপ বেড়েছে। ২০১৭ সালে পুরভোটে শহরের সব ওয়ার্ডে তৃণমূল জিতলেও কিছু এলাকায় তাদের সঙ্গে টক্কর দেয় বিজেপি। গত পঞ্চায়েত ভোটে পানাগড়ে ‘সন্ত্রাস’ প্রতিরোধ করেছিলেন তাঁদের নেতা-কর্মীরাই, দাবি নেতাদের। ডিসেম্বরে কাঁকসায় খুন হয়েছেন দলের এক কর্মী। নানা কল-কারখানায় কাজের সূত্রে এই এলাকাতেও অনেক হিন্দিভাষী রয়েছেন।

Advertisement

বিজেপি নেতাদের ধারণা, এই পরিস্থিতিতে মোদীর সভা থেকে দুর্গাপুরে দলের পালে হাওয়া লাগবে। তা ছাড়া দুর্গাপুর শহর পেরোলেই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্র শুরু। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সে সব এলাকা থেকে অনেকেই সভাস্থলে আসবেন। এই সভা থেকে তাঁদের জন্যও বার্তা দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন নেতারা। দলের জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের বক্তব্য, ‘‘শিল্পাঞ্চলে আমরা ভাল সংগঠন তৈরি করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সভা তা আরও পোক্ত করবে।’’

এ সব দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন জেলার তৃণমূল নেতারা। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, গত চার বছরে হিন্দুস্তান কেব্‌লস, বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় ঝাঁপ পড়েছে। গত লোকসভা ভোটের আগে আসানসোলে বিজেপি প্রচারে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কোনওটিই রাখেনি। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝেই এখন সেখান থেকে মুখ ফেরাচ্ছে তারা, দাবি তৃণমূল নেতাদের।

তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দুর্গাপুরে শ্রমিকদের আন্দোলনে এএসপি কারখানার বিলগ্নিকরণ ঠেকানো গিয়েছে। এখন সেই কৃতিত্বের দাবিদার হতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু ডিএসপি-তে কোনও বিনিয়োগ হয়নি, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের গ্র্যাচুইটি আটকে রয়েছে, আবাসন মেলেনি— এ সবের জবাব প্রধানমন্ত্রীর সভা থেকে মিলবে কি?’’ বিজেপি-র লক্ষ্মণবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ তৃণমূল মানুষের নজর ঘোরাতে এ সব প্রশ্ন তুলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন