এখানেই ঘটে বিস্ফোরণ। —নিজস্ব চিত্র।
বন্ধ বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল কাঁকসার বনকাটি পঞ্চায়েতের শ্যামবাজার কলোনি এলাকায়। সোমবার সকালে বোমা ফাটার শব্দ পান বাসিন্দারা। পুলিশ জানায়, বাড়ির তালা ভেঙে দেখা গিয়েছে ঘরের মধ্যে পড়়ে রয়েছে বোমা তৈরির নানা উপকরণ। ঘটনার পরেই বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান এবং স্থানীয় বাসিন্দা অমরনাথ মণ্ডলের বিরুদ্ধে বোমা রাখা ও তৈরির অভিযোগ করেন। অমরনাথ এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে শ্যামবাজার কলোনির বেশির ভাগ বাসিন্দাই একশো দিনের কাজ করতে গিয়েছিলেন। তাঁরা জানান, সকাল ৮টায় আচমকা বিকট শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। তাঁরা ছুটে এসে দেখেন, এলাকা ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। একটি বন্ধ বাড়ি থেকে ধোঁয়া বার হচ্ছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে, এই বাড়ির মালিক বহু দিন আগেই বীরভূমে চলে গিয়েছেন। বাড়িটি দেখভাল করেন তাঁর পড়়শি তৃণমূল নেতা অমরনাথবাবু। এই ঘটনায় অভিযোগের তির তাঁর দিকেই। মনতোষ বিশ্বাস, অভিজিৎ বিশ্বাস-সহ বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে নানা অসামাজিক কাজকর্ম চলছিল। কিন্তু ওই নেতার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারিনি।’’ কিন্তু এ দিনের ঘটনার পরে এলাকাবাসীর একাংশ বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ঘটনাস্থলে আসে কাঁকসা থানার পুলিশ। পুলিশকে ঘিরে ধরে অভিযুক্ত নেতাকে গ্রেফতারের দাবি জানান এলাকাবাসী।
পুলিশ জানায়, সকাল ৯টায় তালা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে দেখা যায়, বিস্ফোরণের তীব্রতায় দু’টি ঘরের জানালার কাচ ভেঙে গিয়েছে। যে ঘরে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার চারপাশে বারুদের গন্ধ। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সুতলি-সহ বোমা তৈরির নানা উপকরণ। যে ঘরটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই ঘরের জানালার একাংশ ভেঙে গিয়েছে। এমনকি কাঠের এক দরজাও বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে। দেওয়ালেও স্পষ্ট বোমার দাগ। পুলিশ জানায়, ঘরের ভিতর থেকে একটি রাউন্ড কার্তুজ, বারুদ এবং বোমা তৈরির বেশ কিছু সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়িটি আপাতত তদন্তের প্রয়োজনে ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পরে অমরনাথের বিরুদ্ধে একের পর এক নানা অভিযোগ জানাতে থাকেন এলাকাবাসী। কয়েক জন মহিলা অভিযোগ করেন, নানা সময়ে ওই নেতা নানা ভাবে এলাকাবাসীকে হুমকি দেয়। এমনকি, প্রায় এক মাস আগে ওই নেতার এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ জানানোয় তাঁকে মারধর এবং তাঁর স্বামী, সন্তানকে গুলি করার হুমকি দিয়েছিলেন অমরনাথ, অভিযোগ এক মহিলার।
দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী, এসিপি (কাঁকসা) কমল বৈরাগ্য। ডিসি জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে। তবে অভিযুক্ত অমরনাথ ফোনে বলেন, ‘‘দলেরই একাংশ আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমি পঞ্চায়েতের নানা অনিয়মে বাধা দিয়েছি বলেই এমন ঘটনা।’’
তৃণমূলের জেলা শিল্পাঞ্চল কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অমরনাথ মণ্ডলের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। যদি উনি দোষী হন, তা পুলিশ-প্রশাসন নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে।’’