ইট তৈরিতে ব্যস্ত।—নিজস্ব চিত্র।
সরকারকে প্রাপ্য টাকা দিয়ে ভাগীরথীতে জেগে ওঠা চরের মাটি ব্যবহারের অনুমতি চাইল মহকুমার ইটভাটা মালিক সমিতি। তাঁদের দাবি, চরের মাটি কাটা হলে এক দিকে নদীর নাব্যতা বাড়বে, আবার ওই মাটি ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা যাবে। ইটভাটা মালিকদের প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে মহকুমা প্রশাসনও।
কালনায় শ’দুয়েকেরও বেশি ইটভাটা রয়েছে। তার বেশিরভাগ ভাগীরথীর গা ঘেঁষা। সারা বছরই এই ভাটাগুলিতে ইট তৈরির জন্য প্রচুর মাটি প্রয়োজন হয়। মাটির চাহিদা মেটাতে ইটভাটাগুলির নদী লাগোয়া খাদান রয়েছে। ভাটা মালিকদের দাবি, দু’দশক আগেও এই খাদানগুলিতে বন্যা অথবা অতিবৃষ্টির ফলে নদী উপচে দেদার পলিমাটি জমা হতো। সারা বছর তা ইট তৈরির কাজে লাগানো হত। কিন্তু এখন বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় মাটির জোগানও ক্রমশ কমছে বলে তাঁদের দাবি। ফলে বাধ্য হয়েই চড়া দামে এলাকার বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে মাটি কিনতে হয় তাঁদের। মালিকদের দাবি, প্রতিবার সরকারি ভাবে ইটভাটা পিছু ৩ লক্ষ সিএফটি মাটির রয়্যালটি বাবদ প্রায় দু’লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। দুই থেকে তিন কিস্তিতে ওই টাকা দিতে হয়। অথচ খাদানগুলি থেকে প্রয়োজনের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ মাটি মেলে বলে তাঁদের অভিযোগ।
সম্প্রতি কালনা মহকুমার ইটভাটা মালিকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকেন মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ। বৈঠকে নদী লাগোয়া পাড়ের মাটি কাটা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভাটা মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাঁরা খোলা বাজার থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা ট্রাক্টর পিছু মাটি কেনেন। তবে এই মাটি কারা, কি ভাবে, কোথা থেকে নিয়ে আসছে সে ব্যাপার তাঁদের দেখার কথা নয়। তবে পরোক্ষ ভাবে মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার রাস্তাও ওই বৈঠকেই দেখিয়ে দেন ইটভাটা মালিকেরা। তাঁরা জানান, গত পাঁচ বছর ধরে কালনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত ভাগীরথীতে নানা জাগায় লম্বা চর মাথা চাড়া দিয়েছে। যত দিন যাচ্ছে চরগুলি আয়তনে বাড়ছে। প্রচুর পলিমাটিও জমা হয়েছে এই চরগুলিতে। লাগাতার চর তৈরি হওয়ায় এক দিকে যেমন ভাঙন বাড়ছে, তেমনি নদীর উপর দিয়ে জাহাজ, নৌকা চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। ভাটামালিকদের দাবি, নিয়মিত চর কাটা হলে নদী স্বাভাবিক চেহারায় ফিরবে। তাঁরা প্রস্তাব দেন, চরের মাটি কেটে পাড়ে ফেলতে গেলে চাষিরা আপত্তি তুলতে পারেন। সেক্ষেত্রে ওই মাটি ইটভাটাগুলিকে দেওয়া হোক। তাতে মাটিও কাজে লাগবে, সরকারি কোষাগারে রয়্যালটির অর্থও পৌঁছবে। এক ইটভাটা মালিকের কথায়, “ভাটা চালাতে গেলে আমাদের মাটি লাগে ঠিকই, কিন্তু ভাগীরথী লাগোয়া কৃষি জমির মাটি কাটাকে আমরা কোনও ভাবেই সমর্থন করি না। সরকারি ভাবে প্রতি বছর রয়্যালটির টাকা নেওয়া হলেও খোঁজ নেওয়া হয় না পুরো ৩ লক্ষ সিএফটির মাটি মিলছে কি না। বৈঠকে আমরা চরের মাটি দেওয়ার কথা বলেছি। ওই মাটি ভাটা মালিকেরা পেলে তাদের বাইরে থেকে আর মাটি কেনার প্রয়োজন হবে না। ফলে মাটির কারবারিদেরও দৌরাত্ম্যও কমে যাবে।” শিল্পপতি তথা মহকুমা ইটভাটা মালিকদের পক্ষে সুশীল মিশ্র বলেন, “রয়্যালটির অর্থ আমরা নিয়ম মেনেই দিই। তবে ইটভাটা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি ভাবনা-চিন্তার বদল দরকার। আমরা চরের মাটি কেটে এক সঙ্গে অনেক উদ্দেশ্য সাধনের কথা তুলে ধরেছি। এখন দেখা যাক প্রশাসন কি সিদ্ধান্ত নেয়।”
চরের মাটি রয়্যালটির মাধ্যমে কিনে নেওয়ার প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিচ্ছে মহকুমা প্রশাসনও। কালনার মহকুমাশাসক জানান, ভাটা মালিকদের প্রস্তাবটির ভাল দিক রয়েছে। যেহেতু ভাগীরথীর পাড়ে রয়েছে নদিয়া জেলারও বেশ কিছু এলাকা। তাই এ ব্যাপারে একসঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি বলেও তাঁর দাবি। সব্যসাচীবাবু জানান, বিষয়টি নিয়ে নদিয়া জেলার রানাঘাট মহকুমার মহকুমাশাসককে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
ভাটা মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে হাজির ছিলেন শ্রম দফতরের আধিকারিক দেবাশিস চক্রবর্তী। প্রশ্ন ওঠে, বহু ইটভাটায় শিশু শ্রমিকদের কাজ করা নিয়ে। মালিকপক্ষের তরফে অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা শিশু শ্রমিকদের কোনও ভাবেই কাজে লাগান না। উল্টে ইটভাটায় কাজ করা শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের জন্য ভাটার মধ্যেই তারা স্কুলের ব্যবস্থা করেছেন। রয়েছে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থাও।