ভিন্‌-রাজ্যে গিয়ে নির্যাতন রুখতে ব্যবস্থা

জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জামালপুর, পূর্বস্থলী, বর্ধমান, মেমারি, আউশগ্রাম, কাটোয়া, গলসি এলাকার বেশ কিছু পঞ্চায়েতের কম বয়েসী ছেলেদের ভিন রাজ্যে কাজ করার ঝোঁক রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভিন্‌-রাজ্যে কাজে গিয়ে বারবার নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিশোরেরা। সম্প্রতি জামালপুরের এক কিশোরকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসে গুজরাট থেকে। এরপরেই টনক নড়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের।

Advertisement

কর্তারা ঠিক করেছেন, যে সব এলাকা থেকে কিশোরেরা ভিন রাজ্যে কাজে যাচ্ছে, সেগুলি চিহ্নিত করা হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কী কারণে কিশোরদের বাইরে পাঠানো হচ্ছে, তার খোঁজ নেবেন সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিসের কর্মীরা। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মাধ্যমে প্রচার চালাবে প্রশাসন। আজ, বৃহস্পতিবার জামালপুরে এ নিয়ে একটি বৈঠকও করার কথা মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) অনির্বাণ কোলের।

জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “এক সপ্তাহের বেশি স্কুলে আসেনি, এমন ছাত্রদের সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। কেন আসেনি তা খোঁজ নিয়ে বিডিও-র কাছে রিপোর্ট করতে হবে। সমাজকল্যাণ দফতরকেও বলা হয়েছে, যে নাবালকেরা এলাকার বাইরে রয়েছে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট করতে হবে।”

Advertisement

জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জামালপুর, পূর্বস্থলী, বর্ধমান, মেমারি, আউশগ্রাম, কাটোয়া, গলসি এলাকার বেশ কিছু পঞ্চায়েতের কম বয়েসী ছেলেদের ভিন রাজ্যে কাজ করার ঝোঁক রয়েছে। অভিভাবকেরাও বাড়তি টাকার জন্য ‘শ্রমিক-ঠিকাদার’দের মাধ্যমে বাইরে কাজ করতে পাঠান ছেলেদের।

সম্প্রতি গুজরাটে কাজে গিয়ে নির্যাতনের মুখে পড়েছিল জামালপুরের কিশোর। অনাথ ওই কিশোরের অভিযোগ, সিগারেটের ছ্যাঁকা ও গরম লোহার রড দিয়ে নির্যাতন করা হতো। পালানোর চেষ্টা করায় নির্যাতন বাড়ে। ভাগ্নেকে ছাড়ানোর জন্য মামাদের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। না দিতে পারায় অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল বলেও তাঁর দাবি। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। তখন গুজরাটের রাজকোটের ওই ব্যবসায়ী আলমগীর শেখ এক পরিচিতের মাধ্যমে জামালপুরের বেরুগ্রামে পাঠিয়ে দেয় তাকে। ওই কিশোরের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানিয়েছেন, গুজরাটে গিয়ে তদন্ত করার জন্যেও প্রস্তুতি চলছে।

জামালপুরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার আগে আউশগ্রাম থানার একটি গ্রামের কয়েকজন কিশোরী ভিন রাজ্যে কাজে গিয়েছিলেন। প্রায় তিন বছর ধরে ১৫ জন তামিলনাড়ুর ত্রিপুর জেলায় একটি খামার বাড়িতে কাজ করতেন। সেখানে তাদের উপর নির্যাতন চলত। রাতের অন্ধকারে ১১ জন পালিয়ে এসে গত বছরের জুলাই মাসে পুলিশে রিপোর্ট করেন। ছোড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ সুজিত ভট্টাচার্য ওই বছরের সেপ্টেম্বরে টানা ৫ দিন ওখানে থেকে চার কিশোরীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

মহকুমাশাসক অনির্বাণবাবু বলেন, “এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, শিশুসুরক্ষা আধিকারিক, শ্রম দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য শোনা হবে। কী ভাবে শিশুশ্রম আটকানো যায় সে নিয়ে পর্যালোচনা করব।” জেলা প্রশাসন ঠিক করেছে, পুতুল নাচ, পথ নাটিকা, গ্রামীণ যাত্রার মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার চালানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন