Cow Smuggle Case

Cattle smuggling case: সিবিআইয়ের ভয়! বীরভূম লাগোয়া গরুর হাটগুলিতে ভিড় কম, কমেছে বেচাকেনা

আকার-আয়তনে বীরভূমের সুখবাজারের পশুহাটের মতো না হলেও পূর্ব বর্ধমানের সব চেয়ে বড় পশুহাট বলেই পরিচিত কেতুগ্রামের পাচুন্দির হাট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ১৯:৫৯
Share:

কেতুগ্রামের পশুহাট

গরু পাচার-কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই লাটে উঠেছে ব্যবসা। বাইরের রাজ্য থেকে গরু আমদানি যেমন কম হচ্ছে, তেমনই কমেছে বিক্রিও। এমনটাই দাবি বর্ধমানের একাধিক ব্যবসায়ীর। তাঁদের দাবি, সিবিআইয়ের ভয়েই বাজারে এমন মন্দা।

Advertisement

বীরভূমের ইলামবাজার ব্লকের সুখবাজার পশুহাটের মতো মন্দা দেখা দিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামে। সেখানকার বহু পুরনো পাচুন্দির পশুহাটেও গবাদি পশু কেনাবেচায় ভাটা পড়েছে বলেই জানাচ্ছেন কারবারিরা। কারণ, গরু পাচারের অভিযোগের তদন্তে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তৎপরতা। একই ছবি আউশগ্রামের গুসকরা ও খণ্ডঘোষের শেয়ারাবাজার পশুহাটেও। গরু ব্যবসায়ীদের একাংশের ‘অনুযোগ’, গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে হাট চত্বরে পুলিশের নজরদারি বেড়ে যাওয়াতেও ভয়ে অনেকে আসতে চাইছেন না।

জেলার তিন পশুহাটে ইতিমধ্যেই অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রাম ও কেতুগ্রামের পশুহাট থেকে মুর্শিদাবাদ-সহ বিভিন্ন জেলা, এমনকি, পড়শি বাংলাদেশেও গরু পাচার হয়েছে। তার সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের একাংশ এবং শাসকদলের ‘কেষ্টবিষ্টু’রা কী ভাবে জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলা পুলিশের কর্তারা। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন সরাসরি বলেই দেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

Advertisement

আকার-আয়তনে বীরভূমের সুখবাজারের পশুহাটের মতো না হলেও পূর্ব বর্ধমানের সব চেয়ে বড় পশুহাট বলেই পরিচিত কেতুগ্রামের পাচুন্দির হাট। বাইরের রাজ্য থেকেও এই হাটে পশু আসে। প্রত্যেক সপ্তাহের বৃহস্পতিবার হাট বসে। জেলার বিভিন্ন অংশের চাষিরা সেখান থেকে চাষকাজের জন্য বলদ বা বাড়িতে পোষার জন্য গরু কেনেন। এক সময় এই পশুহাটে দিনে কোটি টাকার কেনাবেচারও নজির রয়েছে। গুসকরা ও শেয়ারাবাজার পশুহাট আকার-আয়তনে একটু ছোট। দুই হাটই বসে সপ্তাহে মঙ্গলবার করে। কারবারিদের দাবি, দিনে ১৫-১৬ লক্ষ টাকার মতো ব্যবসা হয়ে থাকে ওই দুই হাটে।

কেতুগ্রাম সীমানাবর্তী এলাকা। অভিযোগ, বীরভূম, মুর্শিবাদাবাদ ও নদিয়া জেলার সঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র হওয়ায় কেতুগ্রামের পশুহাট থেকে গরু পাচারে সুবিধা হত। আউশগ্রামের গুসকরা পশুহাটও বোলপুর লাগোয়া। মেরেকেটে ১০-১২ কিলোমিটার। ওই তিন পশুহাটেই অনুব্রত-‘ঘনিষ্ঠ’দের ‘নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে। প্রশাসনের একাংশের সহযোগিতাও রয়েছে বলে দাবি কারবারিদের একাংশের।

ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম, আউশগ্রাম ও মঙ্গলকোট বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন অনুব্রত। সিবিআই সূত্রে দাবি, পূর্ব বর্ধমানের তিন পশুহাটে অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। কোন কোন এলাকা থেকে হাটগুলিতে পশু নিয়ে আসা হয় বিক্রির জন্য, কোন কোন এলাকার ক্রেতারা আসেন ওই হাটে— এ সবই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, পাচুন্দি পশুহাট থেকে দু’ভাবে গরু পাচার করা হত। সড়কপথ ও নদীপথে। সড়কপথে পাচুন্দি হাট থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। প্রতি বৃহস্পতিবার হাট বসার দিন গাড়িতে চাপিয়ে বা হাঁটিয়ে কেতুগ্রামের বন্দর চেকপোস্ট পার করে সোনারুন্দি পৌঁছত গরু। তার পর সেখান থেকে সালার, কান্দি, বহরমপুর হয়ে জলঙ্গির কাছে পৌঁছে যেত ওই গরুবোঝাই গাড়ি। অন্য পথটি হল, নৌকো করে ভাগীরথী পার করে নদিয়ার হাঁপুকুরিয়া হয়ে বাংলাদেশ। পাচুন্দির হাট থেকে সড়কপথে ১০ কিলোমিটার গেলেই মেলে কল্যাণপুরে ভাগীরথী নদীর ফেরিঘাট, উদ্ধারণপুরের ভাগবন্তপুর ফেরিঘাট এবং ছেঁড়াখালির ফেরিঘাট। সেখান থেকে অনায়াসে নৌকোয় করে ৩০ কিলোমিটারের গেলে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছনো যায়। এই পথেও গরু পাচার হত বলে অভিযোগ। যদিও এই দাবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

গরু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সড়কপথ ও জলপথে গরু নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসা হলেও এখন আর তা সীমান্ত পার করে না। গত বৃহস্পতিবারই দু’নৌকা গরু পূর্ব বর্ধমান থেকে নদিয়া পর্যন্ত গিয়েছে। তবে এই পথে পুলিশের নজরদারি এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। সিবিআইয়ের তদন্তকারীরাও জেলার তিনটি পশুহাটেও ‘রেইকি’ করে গিয়েছেন। এক দিকে সিবিআইয়ের তৎপরতা, অন্য দিকে পুলিশের নজরদারির জেরে কারবারে ভাটা পড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের একাংশের। পাচুন্দি হাটের ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ দে বলেন, ‘‘এক সময় পাচুন্দির পশুহাটে রাতভর কেনাবেচা চলত। তখন ভিন্ রাজ্য থেকেও গরু আসত এখানে। বাইরের রাজ্য থেকে গবাদি পশুর গাড়ি আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন সিবিআইয়ের ভয়ে আর কেউ আসতে চাইছে না। ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। মন্দা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন