জামালপুরে আটক বালির ট্রাক। নিজস্ব চিত্র।
গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ, পুলিশ-প্রশাসনের কড়াকড়ির পরেও বালি তোলায় দাঁড়ি পড়েনি। কোথাও বেআইনি বালি কাটার চোটে হালকা হয়ে গিয়েছে সেতুর থাম, কোথাও পুলিশ প্রশাসনের ‘ভুলবোঝাবুঝি’তে বাজেয়াপ্ত করার পরেও স্থানীয় লোকজন ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে বালি কাটার যন্ত্র। এ বার বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, হুগলিতে বালি তোলা নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রীও।
মঙ্গলবার বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকের পরে বালি পাচার নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বালি, পাথর অবৈধ ভাবে পাচার করে দালালেরা টাকা খেয়ে নিচ্ছে। ওই টাকা না পার্টি ফান্ডে যায়, না সরকারি খাতে জমা হয়। সাধারণ মানুষের কোনও উপকার হয় না। আমি নির্দেশ দিচ্ছি, পুলিশ ও প্রশাসন যাতে কড়া পদক্ষেপ করে। আমি এ সব বরদাস্ত করব না।’’ মমতার এই মন্তব্যের সূত্রে বিরোধীদের কটাক্ষ যে হয়তো বালি পাচারের টাকার একটা অংশ দলের তহবিলে যায়। সেই জন্যই তাঁকে এ কথা বলতে হল।
এ দিনই আবার বর্ধমানের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে ৮৪টি বালির ছোট-বড় গাড়ি আটক করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে ৪০ জনকে। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “বালিবোঝাই গাড়ি নিয়ে আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ আসছিল। সে জন্য সোমবার দুপুর থেকে রাতভর বিশেষ অভিযান চালিয়ে বালির গাড়িগুলি আটক করে সংশ্লিষ্ট দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।”
গত সপ্তাহেই বালি চুরি আটকাতে গেলে পুলিশ ‘বাধা’ দিচ্ছে বলে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন জেলার বিভিন্ন স্তরের আমলারা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দু’মাস ধরে আটকে থাকা কেতুগ্রামের আইসি আবু সেলিমের বদলিও রাতারাতি কার্যকর হয়। পুলিশের সঙ্গে আমলাদের দূরত্বও প্রকাশ্যে কিছুটা কমে। জেলাশাসকের নির্দেশে শুক্রবার থেকেই মহকুমাশাসকরা বালি-অভিযানে নেমে পড়েন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতভর অভিযান চালিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর বর্ধমান ও গলসি থেকে ১১টি, বুদবুদে ৭টি ও মেমারি ১০টি বালির ট্রাক আটক করা হয়। এ ছাড়াও কাটোয়ায় ৭টি, মঙ্গলকোটে ১১টি, মন্তেশ্বরে ৮টি, জামালপুরে ৬টি, রায়না ও মাধবডিহি ৫টি করে বালিবোঝাই গাড়ি ধরা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বেশিরভাগ চালকের কাছে বৈধ চালান ছিল না। বালি কোন খাদান থেকে আসছে বা কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে সে সব কিছুই লেখা ছিল না চালানে। খাদান মালিক বা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের কোনও সই দেখা যায়নি। কোনও সরকারি স্ট্যাম্পও ছিল না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বৈধ চালান না থাকা, ওভারলোডিং ও কেন্দ্রীয় পরিবেশ দফতরের বিধিনিষেধ মেনে যাতায়াত না করায় বালি বোঝাই গাড়িগুলিকে আটক করা হয়েছে।
গলসির ওসি রাকেশ সিংহ বলেন, “আমরা ১১টি বালি বোঝাই গাড়ি ধরেছি। তারমধ্যে ৭-৮টি গাড়ির চালানে গরমিল রয়েছে। বাঁকুড়া ও বর্ধমান দুই জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে চিঠি দিয়েছি।”
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে বেশিরভাগ গাড়ির চালকের বাড়ি হুগলি, দুই চব্বিশ পরগণা, হাওড়া, কলকাতা ও তারপাশে এলাকার। ধৃতদের একদিন জেলা হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।