ব্যাগের বোঝায় বিপাকে শৈশব

১৯৯৩ সালে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে জমা পড়া যশপাল কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, পিঠে ভারী স্কুলব্যাগ এক দিকে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। অন্য দিকে পড়াশোনার আনন্দও কমিয়ে দিচ্ছে। ২০০৬ সালে খুদেদের স্কুলব্যাগের ওজন সংক্রান্ত একটি বিল রাজ্যসভায় পেশ হয়।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৪০
Share:

ভার: স্কুলের পথে খুদেরা। দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র

ভারী ব্যাগের চাপে ক্ষয়ে যাচ্ছে শরীর ও মন, দুই-ই। শিশুদের পিঠে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্কুলের ব্যাগ। স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই ভার, অভিযোগ উঠছে নানা মহলেই।

Advertisement

১৯৯৩ সালে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে জমা পড়া যশপাল কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, পিঠে ভারী স্কুলব্যাগ এক দিকে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। অন্য দিকে পড়াশোনার আনন্দও কমিয়ে দিচ্ছে। ২০০৬ সালে খুদেদের স্কুলব্যাগের ওজন সংক্রান্ত একটি বিল রাজ্যসভায় পেশ হয়। কিন্তু তার পরে আর এগোয়নি। তবে সিবিএসই ২০০৯ সালে নির্দেশিকা দিয়ে জানায়, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে স্কুলব্যাগের ওজন সর্বোচ্চ দু’কেজি, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্ষেত্রে তিন কেজি, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চার কেজির বেশি হবে না। কিন্তু সেই নিয়ম প্রায় কোনও স্কুলেই মানা হয় না বলে অভিযোগ। দেখা যায়, প্রথম, দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারাও চার-পাঁচ কেজি ওজনের ব্যাগ পিঠে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। অথচ চিকিৎসকদের মতে, শিশুর পিঠের ব্যাগের ওজন তার নিজের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি কখনও হওয়া উচিত নয়।

দুর্গাপুর শহরে সকাল বা দুপুরে নানা স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই নজরে পড়ে, স্কুলব্যাগের ভারে নুইয়ে পড়া খুদেরা পুলকারের দিকে এগোচ্ছে। সিটি সেন্টারের এক অভিভাবক বর্ণালী দাস জানান, এক-এক বিষয়ের একাধিক খাতার ব্যবস্থা থাকায় ব্যাগের ওজন বেড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ওজন ২৩ কেজি। স্কুলব্যাগের ওজন প্রায় ৫ কেজি। অথচ, তা আড়াই কেজির বেশি হওয়ার কথা নয়।’’ তিনি আরও জানান, বাড়ি ফিরে মাঝে-মধ্যেই ছেলে ঘাড় ও পিঠের ব্যথায় কাবু হয়ে পড়ে। ডিএসপি টাউনশিপের এক অভিভাবক তানিয়া মুখোপাধ্যায় আবার জানান, সিলেবাসের বাইরেও একাধিক বই রয়েছে। সেগুলির আলাদা-আলাদা খাতা। পেনসিল বক্স, টিফিনবক্স, জলের বোতল— সব মিলিয়ে ব্যাগের ওজন বেড়েই যায়।

Advertisement

বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অবশ্য কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সবাই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। সিটি সেন্টারের একটি স্কুলের অধ্যক্ষা অনিন্দিতা হোমচৌধুরী জানান, দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনও বই নেই। স্মার্ট বোর্ডে ক্লাস নেওয়া হয়। ফলে, সমস্যা তেমন নেই। বড়দের জন্য ক্লাসে-ক্লাসে লাইব্রেরি গড়ার পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছেন তিনি। সেক্ষেত্রে স্কুলে এসে বই নিয়ে পড়াশোনা করে আবার বই জমা দিয়ে বাড়ি চলে যেতে পারবে পড়ুয়ারা। ডিএসপি হাসপাতাল লাগোয়া একটি স্কুলের অধ্যক্ষা পাপিয়া মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে খাতার বদলে ‘ওয়ার্কশিট’ চালু করেছেন। তাতে ওজন অনেকখানি কমেছে। তা ছাড়া বই ভাগ করে নেওয়ার পদ্ধতিও চালুর পথে। ফলে, সব পড়ুয়াকে সব বই আনতে হবে না। বই ভাগ করে নেবে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন