কাটোয়া শহরে ‘ভুয়ো’ চিকিৎসক নিয়ে হইচই হতেই নড়েচড়ে বসল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শুধু স্বাস্থ্য দফতর নয়, জেলার ১৪ জন চিকিৎসকের ডিগ্রি খতিয়ে দেখার জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে সিআইডি।
কাটোয়ার ওই চিকিৎসকের একই সঙ্গে আয়ুর্বেদ ও এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, আবার যে গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে নিজের পরিচয় দেন উনি, আলমপুরে সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিই নেই বলে জেলা স্বাস্থ্য কর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন। এর সঙ্গেই জেলার আরও বেশ কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, “কাটোয়ার ঘটনাটি এসিএমওএইচকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলায় আরও কয়েকটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। সেগুলি তদন্তের পর পুলিশকে জানাব।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, শহরের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত এক চিকিৎসক নিজেকে এমবিবিএস (ডিপ্লোমা) বলে প্রেসক্রিপশনে পরিচিতি দিয়েছেন। আরেক প্যাডে লেখা রয়েছে এমবিবিএস (বায়ো)। আবার আরেকজন ইউক্রেন থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন। তিনি প্রেসক্রিপশনে নিজের নামের পাশে কার্ডিওলজিস্ট বলে পরিচয় দিয়েছেন। আবার দেখা যাচ্ছে, একই চিকিৎসক নিজেকে মেডিসিন ও শল্য বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে চেম্বার খুলেছেন। প্রণববাবু বলেন, “এ ধরণের কোনও ডিগ্রি থাকে নাকি! অভিযোগ পাওয়া মাত্র খোঁজখবর নিতে শুরু করে দিয়েছি।”
জানা গিয়েছে, দশ-বারো দিন আগে বাঁকুড়ার আকুইয়ের বাসিন্দা রিয়া নন্দী পুলিশের কাছে এক চিকিৎসকের ডিগ্রি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে অভিযোগ করেছেন। তিনি ওই অভিযোগে লিখেছেন, খণ্ডঘোষের শঙ্করপুরে ওই চিকিৎসকের বাড়ির গায়ে বোর্ডে হাভার্ড ও বোস্টন থেকে চিকিৎসার ডিগ্রি লেখা রয়েছে। কিন্তু ওই ব্যাক্তি তিন বার পরীক্ষা দিয়েও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করতে পারেননি বলে রিয়াদেবীর দাবি। ওই চিকিৎসকও মেনে নেন, “অল্টারনেটিভ মেডিসিনের কোর্স করেছিলাম। সিআইডির হাতে ডাক্তার ধরা পড়ছে দেখে আমিও সব ডিগ্রি মুছে ফেলেছি।”
পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “এ ধরনের কোনও অভিযোগ পেলে আমরা সিআইডি-র কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।” সিআইডি সূত্রে জানা যায়, বর্ধমানে এখনও পর্যন্ত ১৪ জন চিকিৎসকের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের প্রেসক্রিপশন জোগাড় করে মেডিক্যাল কাউন্সিলে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে রিপোর্ট এলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।