এক সিভিক পুলিশের কোলে দুর্ঘটনায় জখম শিশু। নিজস্ব চিত্র
রাতের রাস্তায় তেলের ট্যাঙ্কার এসে সজোরে ধাক্কা মেরেছিল গাড়ির পিছনে। জখম হন পাঁচ শিশু-সহ ন’জন। দুর্ঘটনার জেরে রুদ্ধ হয়ে য়ায় জাতীয় সড়কের এক দিকের লেন। তার মধ্যেও কোনও রকমে বর্ধমান মেডিক্যালে আনা হয় আহতদের। হাসপাতালে তখন ডিউটি বদল হচ্ছিল সিভিক পুলিশদের। পরিস্থিতি দেখে কেউই আর বাড়ি ফিরলেন না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা অপারেশন থিয়েটার থেকে দেড় বছরের এক শিশুকে বুকে জড়িয়ে বেরিয়ে আসছেন এক সিভিক পুলিশ সৈকত ঘোষ। খুব যত্নে শিশুটিকে পৌঁছেও দিলেন ওয়ার্ডে। আহত মঞ্জু চন্দ্রের স্যালাইনের বোতল ধরে রেখে তাঁকে মহিলা ওয়ার্ডে পৌঁছে দিয়ে এলেন আর এক সিভিক পুলিশ শেখ আলাউদ্দিন। চিকিৎসার কাগজপত্র হাতে নিয়ে তখনও হাসপাতালের এ মাথা থেকে ও মাথা দৌড়ে বেড়াচ্ছেন শেখ বিলাল আলি, মহম্মদ আসরফ, বিশ্বজিৎ বাগদীর মতো আরও অনেকে। ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে থাকা এএসআই আব্দুল নাসিরও হাত লাগান তাঁদের সঙ্গে। বুধবার রাতে কর্তব্যের সময়সীমার বাইরে গিয়েও এমন ভাবে পাশে দাঁড়ানোর, সাহায্য করার সাক্ষী রইল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই গাড়িতে বর্ধমানের নীলপুর থেকে রথতলার দিকে যাচ্ছিলেন দেবাশিস দাস। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী-সহ দুই মহিলা ও পাঁচ শিশু ছিলেন। মীরছোবার কাছে জাতীয় সড়কে দুর্গাপুরমুখী একটি তেলের ট্যাঙ্কার ওভারটেক করতে গিয়ে ধাক্কা মারে গাড়িটিতে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িটি। স্থানীয় বাসিন্দারাই আহতদের উদ্ধার করে ভর্তি করান হাসপাতালে। রাত ১০টায় ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনার খবর পেতেই জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন সিভিক পুলিশেরা। আহতদের গাড়ি থেকে নামানো, ওয়ার্ডে পৌঁছে দেওয়া সবই করেন তাঁরা। এএসআই আব্দুল নাসির বলেন, ‘‘ওই পরিবারের সকলেই কমবেশি চোট পেয়েছিলেন। অন্য কেউ তখনও এসে পৌঁছননি। শিশুগুলিকে দেখার কেউ ছিল না। আগে ওদের তুলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই আমরা।’’ সিভিক পুলিস সৈকত ঘোষ, শেখ আলাউদ্দিনরা বলেন, ‘‘শিশুদের কারও মাথা ফেটেছে, কারও পা কেটেছে। ওদের কান্না দেখে বাড়ি যাওয়ার কথা মনেই হয়নি।’’ শেষে ওদের মায়েদের হাতে তুলে দিয়ে সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়ি ফেরেন তাঁরা। পরে দেবস্মিতা দাস ও মনিকা চন্দ্র নামে দুই শিশুকে কলকাতা রেফার করা হয়।
তবে সিভিক পুলিশদের প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, হাসপাতালের অন্য কর্মীরা কোথায় ছিলেন। যদিও হাসপাতালের দাবি, সব কর্মীই ছিলেন। অনেকেই ওটি বা অন্য ওয়ার্ডের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, ‘‘জরুরি চিকিৎসার সময় সিভিক ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে সকলেই এগিয়ে এসেছেন, সেটা ভাল ব্যাপার।’’ জেলা পুলিশের কর্তারাও এর প্রশংসা করেছেন। পুলিশ ট্যাঙ্কারটি আটক করলেও চালক ও খালাসির খোঁজ মেলেনি।