গোদায় ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে একটি ক্লাবে ‘অশান্তি’।পরে, এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ‘হামলা-ভাঙচুর’, আর এক ব্যাঙ্ক-কর্মীকে ‘মারধর’। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সোমবার রাতে শাসক দলের ‘গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে’র জেরে ওই দুই ঘটনায় তেতে ওঠে বর্ধমান শহরের দু’টি জায়গা—খাগড়াগড় এবং গোদা। তৃণমূলের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডুর অবশ্য দাবি, ‘‘গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নেই। পুরোটাই স্থানীয় সমস্যা। যাঁরা অন্যায় করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত ভাবে ব্যবস্থা নেবে।’’ পুলিশ জানায়, তদন্ত চলছে। তবে কেউ গ্রেফতার হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ‘পোস্ট’ নিয়ে কয়েকদিন আগে বর্ধমানের সাইবার থানায় অভিযোগ হয়। তার জেরেই সোমবার রাতে ঝামেলা বাধে। বর্ধমান পুরসভার বিদায়ী উপপুরপ্রধান খোন্দেকার মহম্মদ শাহিদুল্লাহ রহমান ও তৃণমূল নেতা কাঞ্চন কাজির ‘দ্বন্দ্বও’ সামনে এসেছে, দাবি তৃণমূল সূত্রের।
বিদায়ী উপপুরপ্রধানের ‘গোষ্ঠীর লোক’ বলে পরিচিত আমের আলি মল্লিক বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁদের পাড়ার বেশ কয়েকজন যুবক লাঠি, শাবল, কাটারি, পিস্তল নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয়। তাঁকে না পেয়ে বাড়ি, মোটরবাইক ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। পাশের বাড়ির এক মহিলাকে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও, দাবি তাঁদের। কিছু ক্ষণ পরে, এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী সহিদুর রহমানকে (লোটাস) মারধর করে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় বলেও অভিযোগ। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁকে গলায় দড়ি বেঁধে তিন জন মিলে বেধড়ক মারধর করে। ব্যাঙ্কের তাগাদা করা ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
বর্ধমান থানায় মঙ্গলবার গিয়ে বিদায়ী উপপুরপ্রধান ও তাঁর সঙ্গী খোন্দেকার ফজলুর রহমান (সবুজ মাস্টার) এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান। খোন্দেকার ফজলুর রহমানের দাবি, ‘‘তৃণমূলের নাম করে কয়েকজন এলাকায় অশান্তি তৈরি করছে। তারা একটি বাড়ি ভাঙচুর করে। কয়েকজনকে মারধর করে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমরাও সেই সব বাড়ির পরিস্থিতি দেখে ফিরছিলাম, তখন লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতীরা ফের হামলা চালায়।’’ পরপর দু’টি ঘটনায় পাঁচ জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁদের সোমবার রাতে ছেড়ে দেয় হাসপাতাল।
যদিও কাঞ্চন কাজির দাবি, ‘‘পারিবারিক বিবাদকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাঁদের পায়ের তলায় মাটি নেই, তাঁরা এই চক্রান্ত করছেন।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, বিদায়ী উপপুরপ্রধানের নেতৃত্বে পাড়ায় বিভিন্ন বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যদিও বিদায়ী উপপুরপ্রধান ‘হাস্যকর অভিযোগ’ বলে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, খাগড়াগড়েও একটি ক্লাবের ‘দখল’ নিয়ে দলের দুই গোষ্ঠীর ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে এসেছে। বিধানসভা নির্বাচনে ওই ক্লাবটিকে তৃণমূলের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এখন অস্থায়ী কার্যালয়টিকে স্থায়ী কার্যালয় করতে চাইছে তৃণমূলের কয়েকজন। তা নিয়েই সোমবার রাতে বিবাদ বাধে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।