হকারশূন্য আসানসোল স্টেশন। বৃহস্পতিবার শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।
কয়েক মাস আগেই স্টেশনে হকারদের মধ্যে নিজেদের সংগঠন তৈরি করেছিল বিজেপি। বুধবার আসানসোলে বিজেপি অফিসে আগুন লাগানোর ঘটনায় হকারদের সেই সংগঠনের কমিটিতে নাম থাকা সদস্যদের কয়েক জনকে ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে বলে জানাল পুলিশ। যদিও এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। এমন পরিস্থিতিতে ওই কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজেপি প্রভাবিত ভারতীয় জনতা মজদুর মোর্চার রাজ্য নেতৃত্ব। যদিও এমন কোনও বৈধ ইউনিয়ন শহরে নেই বলে এ দিনও দাবি করেছেন আসানসোলের বিজেপি নেতারা।
স্টেশন থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করে দেওয়া নিয়ে এলাকার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি, এই অভিযোগে বুধবার আসানসোলে মিছিল করেন কিছু হকার। নিজেদের বিজেপি সমর্থক হিসেবেই পরিচয় দেন তাঁরা। মিছিল শেষে আসানসোল বাজারে একটি বিজেপি অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আসানসোলের এক পুলিশকর্তা জানান, এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে যাঁদের ছবি ধরা পড়েছে তাঁদের অনেকেই বিজেপির হকার সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। তাঁদের খোঁজ চলছে।
গোটা ঘটনার পিছনে তাঁদের কেউ জড়িত নন, বরং তৃণমূলের মদত রয়েছে বলে বুধবার দাবি করেছিলেন আসানসোলের বিজেপি নেতারা। এই শহরে হকারদের মধ্যে তাঁদের কোনও সংগঠনই নেই বলে দাবি করেছিলেন দলের আসানসোলে জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার। কিন্তু ঘটনা হল, মাস ছয়েক আগে ভারতীয় জনতা মজদুর মোর্চা হকারদের একটি সংগঠন তৈরি করে এখানে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কর ঘোষ একটি কার্যকরী কমিটিও গড়ে দেন। সেটির সদস্যের নাম লেখা একটি চিঠি জমা দেওয়া হয় ডিআরএমের কাছেও।
এ দিন শঙ্করবাবু জানান, আসানসোল ডিভিশনের প্রায় ৬৪২ জন হকার তাঁদের সংগঠনের সদস্য। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি অফিসে আগুন লাগানোয় জড়িতরা আমাদের তৈরি সংগঠনের সদস্য কি না, সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ সত্যি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই কমিটিও ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক জিতেন রাজোয়ার। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ খবর শুরু করেছি। কয়েক দিন সময় লাগবে।’’
যদিও এ দিনও আসানসোলে তাঁর শ্রমিক সংগঠন অনুমোদিত কোনও বৈধ হকার সংগঠনের অস্তিত্বের কথা মানতে চাননি বিজেপি নেতা নির্মলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘জেলা সভাপতির অনুমোদন না নিয়ে যদি কোনও সংগঠন তৈরি হয় তা একেবারেই বৈধ নয়। এ ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে।’’ এই রকম একটি সংগঠন তৈরি হল কী ভাবে, সে প্রশ্নে নির্মলবাবু বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছি। তাঁদের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।’’
আসানসোলে বিজেপির ওই হকার সংগঠনের সহ-সভাপতি মহম্মদ মুক্তার অবশ্য সাফ জানান, বুধবার ওই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনিই। তবে তাঁর দাবি, বিজেপি অফিসে আগুন লাগানোর কোনও পরিকল্পনা তাঁদের ছিল না। মিছিলের কয়েক জন অতি উৎসাহে জ্বলন্ত কুশপুতুল বিজেপি অফিসের চালে ছুড়ে দেওয়ায় আগুন লেগে যায়। মুক্তারের অভিযোগ, ‘‘আমরা দিন আনি-দিন খাই। ছ’মাস ধরে বিজেপির সঙ্গে আছি। কিন্তু নেতারা আমাদের কথা শুনছেন না, উল্টে দুর্ব্যবহার করছেন। তাই প্রতিবাদ জানিয়েছি।’’ মুক্তার এর আগে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও যোগের কথা অস্বীকার করলেও জনা কয়েক হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা আগে তৃণমূলের হকার ইউনিয়নের সঙ্গে ছিলেন। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ার পরে শাসকদলের কাছ থেকে কোনও সাহায্য না মেলায় বিজেপিতে ঘেঁষতে শুরু করেন।
তৃণমূল অবশ্য গোটা ঘটনা থেকে দূরত্ব রাখছে। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘আমাদের হকার সংগঠন থেকে কেউই বিজেপির দিকে যাননি। এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও রকম সম্পর্ক নেই।’’ এ দিন আসানসোল স্টেশন চত্বর ছিল পুরোপুরি হকার-শূন্য। প্ল্যাটফর্ম বা ট্রেন, কোথাও হকার দেখা যায়নি। টহল দিতে দেখা গিয়েছে আরপিএফকে।