জেলার ১৯টি সমবায় সমিতি ধান কিনতে খাদ্য দফতরকে সাহায্য না করায় তাদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করতে চেয়ে চিঠি পাঠাতে চলেছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “সোমবার সংশ্লিষ্ট দফতরে ওই চিঠি পাঠানো হবে। ওই সমবায় সমিতির নিবন্ধীকরণ বাতিলের জন্যেও সুপারিশ করা হবে।’’
এ দিনই জেলাশাসক ও জেলা খাদ্য নিয়ামক দেবমাল্য বসু ধান কেনার গতি দেখার জন্য আউশগ্রামের তিনটে শিবিরে যান। সেখানে চাষিদের সমস্যার কথা শোনার পরে স্থানীয় একটি চালকল কর্তৃপক্ষকে ধমকও দেন জেলাশাসক।
জেলা চালকল মালিক সমিতির অভিযোগ, বেনফেড ও চালকলগুলির সঙ্গে প্রায় দু’সপ্তাহ আগে ধান কেনার শিবির করবে বলে চুক্তি করেছিল ৭৩টি সমবায় সমিতি। তার মধ্যে ৫৪টি সমবায় সমিতি ধান কেনার শিবির করলেও ১৯টি সমবায় সমিতি এখনও মাঠে নামেনি। বারবার বলার পরেও বর্ধমান, মেমারি, ভাতার, গলসি, রায়না ও কেতুগ্রামের ওই সমিতিগুলির ধান কেনার গরজ নেই বলে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সমবায় দফতর। কিন্তু চুক্তির পরেও ধান কিনতে অনাগ্রহ কেন? উত্তর নেই সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছেও। সমবায় দফতরের বর্ধমান রেঞ্জ ১-এর এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই সব সমবায় কর্তারা কেন ধান কিনতে চাইছেন না, সেটা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু কর্তারা মুখ ফুটে বা লিখে কিছু জানাচ্ছেন না বলে সমস্যা হচ্ছে।”
যদিও ওই ১৯টি সমবায় সমিতির একাধিক কর্তার দাবি, বেনফেডের কর্মীরাই ধান কেনার জন্য যোগাযোগ করেননি। চাষিরা টাকা কী ভাবে পাবেন তা নিয়েও কোনও বৈঠক হয়নি। ফলে শিবির করা যাচ্ছে না। বেনফেডের তরফে আবার দাবি, তাদের বর্ধমান জেলার আধিকারিককে হঠাৎ করে বদলি করে দেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি দেবনারায়ণ মণ্ডলের কথায়, ‘‘ধান কেনার গতিতে ধাক্কা খেলেই আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়। অথচ সরকারি সংস্থাগুলিই ধান কিনতে উৎসাহী নয়।’’ ওই সমিতির সহ সভাপতি আব্দুল মালেকও বলেন, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে জেলাশাসক থেকে দফতরের মন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। চালকলের জন্য সরকারের উদ্দেশ্য যে ব্যাহত হচ্ছে না, তা স্পষ্ট হয়ে গেল।” জেলা খাদ্য নিয়ামক দেবমাল্য বসুর কথায়, “শনি ও রবিবার ধান কিনতে নামলে বেঁচে যাবে সমবায় সমিতিগুলি। তা না হলে জেলাশাসকের নির্দেশ মতো আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।”
এ দিন সকালে জেলাশাসক আউশগ্রাম ২ ব্লকের অভিরামপুর, দেবশালা ও সর গ্রামের ধান কেনার শিবিরে যান। চাষিরা জানান, ধান বিক্রি করতে গেলে প্রতি ক্যুইন্টালে ১৪ কেজি করে বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার থেকে খোলা বাজারে ধান বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি শুনে জেলাশাসক স্থানীয় এক চালকল কর্তৃপক্ষকে কড়া ধমক দেন। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দেন। জেলাশাসকের কথায়, “চাষিদের সুবিধা দিতে হবে। একই সঙ্গে ধানের আর্দ্রতা চাষিদের সামনেই মাপার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”