—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP
গত বছর ধান কেনা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছেন আউশগ্রাম ১ ব্লকের একটি মহিলা সমবায় সমিতির কয়েক জন সদস্য। সম্প্রতি ওই ব্লকের দিগনগর ২ পঞ্চায়েতের সংশ্লিষ্ট সমবায়ের মহিলা সদস্যদের একাংশ ওই চিঠিতে স্পষ্ট ভাবে জানতে চেয়েছেন, ‘বিরামহীন দুর্নীতি, অনিয়মের পাহাড় জমিয়ে সংস্থাটিকে ‘লালবাতি’ জ্বালিয়ে দেওয়ার অবস্থানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না কেন?’ জেলার সহকারী সমবায় আধিকারিক বা এআরসিএস (বর্ধমান রেঞ্জ ১) সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “জেলার মিশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিট বিষয়টি দেখছে।
কথা হয়েছে।”
জেলার মিশন ম্যানেজমেন্ট ইউনিট সূত্রে জানা যায়, ওই সমবায় নিয়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে। কিছু গরমিল থাকায় অ্যাকাউন্টে লেনদেন সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখেছে ব্যাঙ্ক। গত ৩০ অক্টোবর একাধিক প্রশ্ন তুলে চিঠি জমা পড়েছে। তার ভিত্তিতে একটি দলকে অডিট করে বিস্তারিত খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
ওই চিঠির শুরুতেই অভিযোগ করা হয়েছে, মহিলাদের জন্য সমবায় সমিতি হলেও কী ভাবে একজন পুরুষকে ঋণ দেওয়া হল, তা নিয়ে অধিকাংশ সদস্য অন্ধকারে। আর এটা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, এক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নামের ঋণ পেয়ে গিয়েছেন অন্য একটি গোষ্ঠীর বিশেষ কোনও সদস্য। বলা হয়েছে, ‘যে গোষ্ঠীর নামে ঋণ তোলা হল, সেই গোষ্ঠী কিছুই জানতে পারল না। অথচ ব্যাঙ্কের খাতায় গোষ্ঠীটি ঋণের জালে জড়িয়ে থাকল!’ অনাদায়ী ঋণ আদায় নিয়েও গড়িমসি চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সামনে আনা হয়েছে আরও অনিয়ম। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ধান কেনার জন্য সমিতি বা সঙ্ঘ কত টাকা পেয়েছে। ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত কত টাকার ধান কেনা হয়েছিল, তার তথ্য ‘ক্যাশ বুকে’ কী ভবাে নথিভুক্ত রয়েছে। ধান বিক্রেতাদের নামের তালিকাও প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছে।
সদস্যদের একাংশের দাবি, অত্যাবশকীয় পণ্য নিগমের (ইসিএসসি) মাধ্যমেই সমিতি বা সঙ্ঘ ধান কেনে। চালকল মালিক বাকিবুর রহমান, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের গ্রেফতারের পরে জানা যাচ্ছে, একাধিক সমিতি বা সঙ্ঘ ‘ভুয়ো’ কৃষক তৈরি করে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার নামে সরকারের টাকা লুট করেছে। শুধু ধান কেনা নয়, স্কুলের পোশাক সরবরাহ করাতেও দুর্নীতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সমিতির সাধারণ বৈঠকে অডিট রিপোর্ট পেশ করলে এ সব প্রশ্ন উঠত না।
বোর্ডের সদস্যরা জানান, বার বার অভিযোগ ওঠায় সমিতির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। তিন জন কর্মচারীর বেতন দেওয়া ছাড়া সমিতির বর্তমানে কার্যত কাজ নেই। সম্পাদক মিঠু ঘোষ বলেন, “পরিচালন সমিতিতে ১৫ জন সদস্য রয়েছি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকায় আমরা যাতায়াতেরও কোনও খরচ পাচ্ছি না। বারবার মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমাদের কাছে সব ধরনের অডিট-সহ নথি রয়েছে। সমিতির দখল নেওয়ার জন্য সিপিএম চক্রান্ত করছে।” একই দাবি করেছেন কোষাধ্যক্ষ অনামিকা রায়ও। তাঁর দাবি, “আমাদের সব কাগজ ঠিক আছে।” সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলা থেকে গত বুধবার একটি দল সমিতিতে এসেছিল।
সিপিএমের দিগনগর (২) শাখার সম্পাদক অনুপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ধান কেনা-সহ নানা বিষয়ের কোনও জবাব নেই। দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করছি, সে জন্যই আমরা সরব হয়েছি।”