ডাইনি অপবাদে ঘর ছাড়ার হুমকি

অন্যতম অভিযুক্ত মানসিংহ হাঁসদার দাবি, ওই মহিলার সঙ্গে এমন এক ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে, যিনি আদিবাসী নন। তাই আদিবাসী সমাজের বিধি অনুযায়ী, মহিলাকে ওই ব্যক্তির সঙ্গে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁকসা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

নির্যাতিতা: অভিযোগকারিণীর সঙ্গে কথা বলছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক মহিলাকে গ্রাম ছাড়ার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায়। ঘটনাস্থল দুর্গাপুর শহর থেকে বড়জোর পনেরো কিলোমিটার দূরে। স্বামী-বিচ্ছিন্না আদিবাসী ওই মহিলার অভিযোগ, তাঁকে মারধরের হুমকি দিচ্ছেন গ্রামের কয়েকজন। বাড়িতে ইট-পাথরও ছোড়া হচ্ছে। মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরার কাছে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

মহকুমাশাসকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের রাজডাঙা গ্রামে গিয়ে অভিযোগকারিণী ও অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলেন ব্লক প্রশাসন ও পুলিশের কর্তারা। কিন্তু তাঁরা ফেরার পরেই রাতে ফের গ্রামবাসীর একাংশ বাড়িতে চড়াও হয়ে হুমকি দেয় বলে মহিলার অভিযোগ।

রাজডাঙা গ্রামে প্রায় ৩০টি পরিবারের বাস। বেশিরভাগ বাসিন্দাই দিনমজুর। বছর তিরিশের ওই মহিলার একটি মুরগি-খামার রয়েছে। তিনি জানান, বছর দশেক আগে স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। তাঁর বারো বছরের ছেলে দুর্গাপুরে থেকে পড়াশোনা করে। মহিলার অভিযোগ, কয়েকমাস আগে আচমকা গ্রামের কয়েকজন তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিতে শুরু করেন। তাঁর খামারে মুরগির খাবার দিতে আসা গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। নিয়মিত বাড়িতে ইট ছোড়া, গ্রাম ছাড়ার জন্য হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। বুধবার মহকুমাশাসকের কাছে কিছু পড়শির নামে অভিযোগ করেন তিনি।

Advertisement

অন্যতম অভিযুক্ত মানসিংহ হাঁসদার দাবি, ওই মহিলার সঙ্গে এমন এক ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে, যিনি আদিবাসী নন। তাই আদিবাসী সমাজের বিধি অনুযায়ী, মহিলাকে ওই ব্যক্তির সঙ্গে অন্যত্র চলে যেতে বলা হয়েছে। মানসিংহের বক্তব্য, ‘‘ডাইনির মতো কুসংস্কারে বিশ্বাস করি না। তাই ওই অপবাদ দিইনি। মারধরের হুমকি বা ইট ছোড়ার কথাও মিথ্যে।’’ মহিলা অবশ্য ওই সম্পর্কের কথা ‘রটনা’ বলে দাবি করেন। বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস, আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এসিপি (কাঁকসা) কমল বৈরাগ্য এ দিন গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। বিডিও বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের বোঝানো হয়েছে। আশা করি, আর সমস্যা হবে না। ওই মহিলাকে প্রশাসনের তরফে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’’ যদিও রাতেই ফের হুমকি শুনতে হয়েছে বলে মহিলার অভিযোগ। পুলিশ জানায়, ওই গ্রামে পাহারার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

মাস দুয়েক আগে কাঁকসারই গোপালপুরে এক মহিলাকে ডাইনি অপবাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের কাঁকসা কেন্দ্রের সম্পাদক অরুণকিরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় এখনও বারবার ডাইনির মতো কুসংস্কারের অভিযোগ উঠছে, এটা দুর্ভাগ্যের। আমরাও ওই গ্রামে গিয়ে মানুষজনকে বোঝাব।’’

নির্যাতিতা: অভিযোগকারিণীর সঙ্গে কথা বলছেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন