অ্যাকাউন্টে লক্ষ-লক্ষ টাকার লেনদেন, জানেনই না গ্রাহক!

বাড়ির কাছেই সাইকেল সারাইয়ের দোকান চালান বছর পঞ্চাশের গৌতম নন্দী। তাঁর স্ত্রী সীমাদেবী বিড়ি বাঁধার কাজ করেন। আরামবাগে আইটিআই-এ পড়াশোনা করেন তাঁদের ছেলে তন্ময়। নবদ্বীপে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চারিচারা শাখায় অ্যাকাউন্ট রয়েছে গৌতমবাবুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৩
Share:

প্রতীকী চিত্র।

শুধু টাকা তুলে নেওয়া নয়, গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই চলেছে প্রতারণার কারবার। সাইকেল মেরামতির মিস্ত্রির অ্যাকাউন্টে লক্ষ-লক্ষ টাকার লেনদেন দেখে টনক নড়েছিল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। পূর্বস্থলীর দক্ষিণ শ্রীরামপুরের নবপল্লির বাসিন্দা ওই মিস্ত্রিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে জানা যায়, ভিন্‌ রাজ্য থেকে প্রতারকেরা ব্যবহার করেছে তাঁর অ্যাকাউন্টটি।

Advertisement

বাড়ির কাছেই সাইকেল সারাইয়ের দোকান চালান বছর পঞ্চাশের গৌতম নন্দী। তাঁর স্ত্রী সীমাদেবী বিড়ি বাঁধার কাজ করেন। আরামবাগে আইটিআই-এ পড়াশোনা করেন তাঁদের ছেলে তন্ময়। নবদ্বীপে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চারিচারা শাখায় অ্যাকাউন্ট রয়েছে গৌতমবাবুর। তিনি জানান, কখনও পাঁচ, কখনও দশ হাজার টাকা জমা রাখতেন। ছেলে এটিএমের মাধ্যমে পড়াশোনার খরচের জন্য সেই টাকা তুলে নিতেন। ইদানীং অল্প টাকাই ছিল অ্যাকাউন্টে।

গৌতমবাবু জানান, মাস পাঁচেক আগে গ্যাসের ভর্তুকি দেওয়া হবে জানিয়ে এক যুবক তাঁকে ফোন করে হিন্দিতে তাঁর অ্যাকাউন্ট নম্বর জানতে চায়। তিনি তা জানিয়েছিলেন। তাঁর ছেলে আবার জানান, সপ্তাহ তিনেক আগে অনলাইনে একটি জামা কেনেন তিনি। তার পরেই একটি নম্বর থেকে জানানো হয়, তিনি পুরস্কার জিতেছেন। তা পাওয়ার জন্য অ্যাকাউন্ট নম্বর চাইলে দিয়ে দেন তিনি।

Advertisement

বুধবার আচমকা গৌতমবাবুর বাড়িতে আসেন ব্যাঙ্কের এক প্রতিনিধি। তিনি গৌতমবাবুকে ব্যাঙ্কে দেখা করতে বলেন। ছেলেকে নিয়ে প্রৌঢ় সেখানে গেলে জানানো হয়, তাঁর অ্যাকাউন্টে নিয়মিত লক্ষ-লক্ষ টাকার আদানপ্রদান চলেছে। শুনে অবাক হন গৌতমবাবু। তিনি ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের জানান, এ ব্যাপারে তাঁর কিছুই জানা নেই। ৭ নভেম্বর ব্যাঙ্কের এক আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে তাঁকে।

গৌতমবাবুর ব্যাঙ্কের পাশবইয়ে দেখা গিয়েছে, ১৬ ও ১৭ অক্টোবর ২১ বার করে টাকা জমা-তোলা হয়েছে অ্যাকাউন্টে। কখনও জমা পড়েছে ২৫ হাজার, আবার কখনও এক লক্ষেরও বেশি টাকা। তার পরে সেই টাকা ধাপে-ধাপে তুলে নেওয়া হয়েছে। টাকা তোলা-জমার সময়ে বিহারের জামতাড়া থেকে গৌতমবাবুর ফোনে এসএমএস এসেছে। তাঁর দাবি, পড়াশোনা তেমন না জানায় তিনি সেগুলি বুঝতে পারেননি। গৌতমবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমার পাঁচ-দশ হাজার টাকা যা ছিল সে তো গিয়েছেই। ১৭ অক্টোবরের পরে অ্যাকাউন্টের তথ্য পাইনি। জানি না এই সময়ের মধ্যে আর কী ঘটেছে!’’

বিষয়টি নিয়ে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তা জানার জন্য বারবার চেষ্টা করেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে শিবির করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার বন্দোবস্ত হবে।’’ জেলা পুলিশের সাইবার সেল জানায়, ব্যাঙ্ক বা গ্রাহকের তরফে বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনও অভিযোগ করা হয়নি। তা করা হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন