করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা জেলা জুড়ে, হেল্পলাইন: ০৩৪২-২৬৬ ৫০৯২
Coronavirus

নজরে ন’জন, পৃথক ব্যবস্থা হাসপাতালে 

এ দিন দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০২:১৯
Share:

জেলা প্রশাসনের সভা। নিজস্ব চিত্র

সদ্য চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ফিরে বর্ধমান শহরে রয়েছেন, এমন ন’জনকে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাঁদের আপাতত বাড়ির বাইরে বার হতে নিষেধ করেছে জেলা প্রশাসন। বাড়ি গিয়ে তাঁদের দু’বেলা স্বাস্থ্যপরীক্ষা করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও মহকুমা হাসপাতালের ভিতরে ‘আইসোলেশন’ ওয়ার্ড গড়া হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার বিশেষ ‘মাস্ক’ মজুত রাখতে চলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

Advertisement

শুক্রবার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘আতঙ্কের কিছু নেই। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সচেতনতার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর ‘ক্যুইক রেসপন্স টিম’ তৈরি করবে বলেও জানান তিনি।

এ দিন দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য ছয় শয্যার একটি পৃথক ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। ট্রমা কেয়ার সেন্টার থেকে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও করা হবে, জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। প্রয়োজনে নির্মীয়মাণ আট তলা ভবনটিকেও ব্যবহার করার কথা ভাবা হয়েছে। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান দীনবন্ধু নাগের নেতৃত্বে একটি দল গড়া হয়েছে। স্ত্রী ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, কার্ডিওলজি ও শিশু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নার্সেরাও রয়েছেন সেই দলে। হাসপাতালের সুপার প্রবীর সেনগুপ্ত বলেন, “করোনা ভাইরাসের জন্য প্রায় ১০ হাজার বিশেষ মাস্ক মজুত রাখা হচ্ছে।’’

Advertisement

করোনা-সংক্রমণের মোকাবিলায় সতর্কতা ও সচেতনতার উপর জোর দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ জেলাশাসকের দফতরেও একটি বৈঠক হয়। ঠিক হয়েছে, পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক বিডিও ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ)-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, সে সম্পর্কে জনসাধারণকে জানাতে হবে। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও জনবহুল জায়গায় প্রচার করার কথাও ভাবা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, জ্বর-সর্দি-কাশি এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভাল করে হাত ধোয়া এবং নিয়মিত ভাবে বাড়ি পরিষ্কার রাখারও পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। এ ছাড়া, কেউ যদি জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হন, তাঁর থেকে ন্যূনতম এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

নির্দেশিকা মেনে কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতালেও এ দিন থেকে ১০ শয্যার পৃথক ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের ওই ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টে’র (পিপিই) সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে পরে মাস্ক, গামবুট, গ্লাভস, বিশেষ চশমা ও মাথা ঢাকা বিশেষ পোশাক। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, “প্রত্যেক জায়গাতেই মাস্ক রয়েছে। তার পরেও জেলায় আরও ৪০ হাজার বিশেষ মাস্ক কেনার বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’

বিশ্বের নানা প্রান্তে মারণ থাবা বসিয়েছে করোনাভাইরাস। এ দেশে এখনও পর্যন্ত ৩০ জন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। গত কয়েক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে বলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পর্যবেক্ষণ। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ থেকে কেউ এলে তাঁদের উপর নজরদারি রাখার কথা বলা হয়েছে। সিএমওএইচ বলেন, “এখনও পর্যন্ত এ রকম ন’জনের সন্ধান মিলেছে। তাঁদের আপাতত বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। তাঁদের ‘হোম আইসোলেশনে’ রাখা হয়েছে।’’

জানা গিয়েছে, এ দিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোলের একটি আলোচনাসভায় বাইরের দেশের বেশ কয়েকজন গবেষকের আসার কথা ছিল। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা থেকে কুড়ি জন এলেও চিন, জাপান থেকে যে আট জনের আসার কথা ছিল, তাঁরা আসেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন