ফাইল চিত্র
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি থেকে দুর্গাপুরে বাড়ি ফিরেছেন পেশায় জাহাজের কর্মী এক যুবক। তাঁর দাবি, একাধিক বিমানবন্দরের পরীক্ষায় তাঁর করোনা-উপসর্গ নেই বলে জানানো হয়েছে। ওই যুবকের বাবা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের (ডিপিএল) কর্মী। তাঁকে ডিপিএল ছুটিতে পাঠিয়েছে। কিন্তু বাবা ও ছেলে বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন বলে দাবি পড়শিদের। স্বাস্থ্য-কর্তারা নাগরিকদের গুজবে কান না দেওয়ার কথা বললেও বিদেশ থেকে আসা বাসিন্দাদের ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকারই পরামর্শ দিচ্ছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কোকআভেন থানার ডিপিএল কলোনির বাসিন্দা ওই যুবক ভারতীয় সময়ে গত রবিবার আমেরিকার মায়ামি থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছন। সেখান থেকে সোমবার গভীর রাতে নামেন দমদমে। ওই যুবকের দাবি, মায়ামি, দোহা ও দমদম, তিন বিমানবন্দরেই ‘থার্মাল স্ক্যানিং’-সহ নানা পরীক্ষায় করোনা-উপসর্গ ধরা পড়েনি। দমদমে তিনি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র সই করে জমা দেন। মঙ্গলবার যুবক বাড়ি ফেরেন। কিন্তু ডিপিএল-এর জনসংযোগ আধিকারিক স্বাগতা মিত্র বলেন, ‘‘প্ল্যান্টে কর্মীদের এন-৯৫ মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই যুবকের বাবাকে তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বুধবার থেকে ১৪ দিনের ছুটি দিয়ে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।’’ প্ল্যান্টে সচেতনতা প্রচার জরুরি বলে মনে করেন সংস্থার শ্রমিক নেতা উমাপদ দাসও।
ওই যুবক জানান, গত বছর জুলাইয়ে ইটালিতে কাজে যোগ দেন তিনি। সেপ্টেম্বরে তাঁদের জাহাজ ইউরোপ ছেড়ে আমেরিকায় পৌঁছয়। শেষ কয়েক মাসে জাহাজটি আমেরিকা, মেক্সিকো, কলম্বিয়া, পানামা-সহ নানা এলাকায় যায়।
পাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেরই অভিযোগ, করোনাভাইরাস দেশ-সহ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে জরুরি সচেতনতা। কিন্তু ওই যুবক ও তাঁর বাবা নিয়মিত বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন। যুবকের বাবা বৃহস্পতিবার সকালে বাজারেও গিয়েছিলেন বলে তাঁদের দাবি। তবে ওই যুবকের দাবি, ‘‘যে কোনও বিমানবন্দরের পরীক্ষায় ন্যূনতম সন্দেহ হলে আমাকে বাধ্যতামূলক কোয়রান্টিনে পাঠানো হত। দমদম বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, বাইরে থেকে এসেছি বলে কয়েকদিন ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। আমি ঘরেই আছি। বুধবার বিকেলে এক বার পাড়ায় বেরিয়েছিলাম। তবে কারও কাছে ঘেঁষিনি। অনেকে অপপ্রচার করছেন। অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে।’’ তবে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কর্তারা জানান, এমন পরিস্থিতিতে ঘরের বাইরে ক’দিন না বেরনোই ভাল। জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ অনুরাধা দেব বলেন, ‘‘বিদেশ থেকে আসা মানুষজনের এই মুহূর্তে হোম-কোয়রান্টিনে থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। তবে অযথা গুজব কেউ ছড়াবেন না।’’ মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলেও একই কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘ওই যুবকের গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে।’’ দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাসের পরামর্শ, এমন পরিস্থিতিতে অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বেরনোই ভাল।