বৈদ্যনাথপুরের নামোপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাজ্য তথা জেলার নানা প্রান্তের মতো এ বার পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের বৈদ্যনাথপুরের নামোপাড়াতেও এগিয়ে এলেন এলাকাবাসীর একাংশ। গ্রামে ঢোকার তিন দিকে রীতিমতো ‘নাকা ক্যাম্প’ চালু করেছেন তাঁরা।
কেন এই পদক্ষেপ? অজয়ের দক্ষিণ পাড়ে এই গ্রাম। নদের উত্তরে বীরভূম। অজয় সেতু বন্ধ থাকায় গ্রামের রাস্তা দিয়ে মোটরবাইক ও সাইকেলে যাতায়াতের প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। জল প্রায় না থাকায় সাইকেল ও মোটরবাইক চালিয়ে নদ সহজেই পার হওয়া যাচ্ছে। এ ভাবেই চলছে বীরভূম-পশ্চিম বর্ধমানের মধ্যে যাতায়াতও। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী বাঁশের ব্যারিকেড তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
সম্প্রতি তৈরি হওয়া ব্যারিকেডগুলিতে ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পালা করে পাহারা দিচ্ছেন তিন জন করে যুবক। যাতায়াতকারী স্থানীয় ও বহিরাগতদের নাম, ঠিকানা ও যাতায়াতের কারণ লিখে রাখা হচ্ছে।
পাহারায় থাকা দীপক পাল, চন্দন পাল, রাজা গড়াই প্রমুখ জানান, বেশির ভাগ বহিরাগতই ওষুধের দোকান বা ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার ‘অজুহাতে’ রাস্তা ব্যবহার করতে চাইছেন। স্থানীয়েরা বাজার যাচ্ছেন। কিন্তু অজুহাত বোঝা সম্ভব হচ্ছে কী ভাবে? দীপকবাবুরা জানান, ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা বললে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের ফোন নম্বর চেয়ে কথা বলা হচ্ছে, রোগী কোথায় তা দেখতে চাওয়া হচ্ছে। অথবা, কোনও হাসপাতালে যাওয়ার কথা বললে, প্রয়োজনীয় নথিপত্র দেখা হচ্ছে। কারও কাছে এ সব না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শর্তসাপেক্ষে যেতে দেওয়া হচ্ছে। চন্দনবাবু বলেন, “শর্ত এটাই: ‘লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর এই রাস্তা ব্যবহার করব না’, এই মর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে লিখে দিতে হবে। আমাদের এই কাজের ফলে অকারণে রাস্তা ব্যবহার অনেকটাই কমেছে।” ওই যুবকদের দাবি, গ্রামের সবার মতামত নিয়েই এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে এই কাজ করেছেন তাঁরা।
এই প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য যমুনা ধীবর, লক্ষ্মী ঘোষ ও মধুসূদন ঘোষেরা। পাহারার দায়িত্বে থাকা দীপকবাবুরা জানান, মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাঁরা এই কাজ করছেন।
বিডিও (পাণ্ডবেশ্বর) কৌশিক সমাদ্দার বলেন, “চিকিৎসাজনিত কারণ ছাড়া, কেউ যাতে অজয় পারাপার করতে না পারেন, তা দেখতে বলা হয়েছে পুলিশকে। গ্রামবাসীর এই কাজ অত্যন্ত ভাল। তবে কিছু সতর্কতা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”