Coronavirus

জাতীয় সড়ক ধরে ফিরছেন শ্রমিকেরা

বিহারের বারাউনি থেকে কুড়ি জনের একটি দল হেঁটে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুরে ফিরছিল।

Advertisement

সুশান্ত বণিক ও সুব্রত সীট

আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২০ ০২:২১
Share:

আসানসোলে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে। নিজস্ব চিত্র

৭৫০, ৪০০, ৬০০...। প্রতিটি সংখ্যাই কিলোমিটারের হিসেব। এই দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে ভিটেয় ফিরছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকেরা। এই জনস্রোতের কারও বাড়ি রাজ্যের কেতুগ্রামে, কারও বা ক্যানিং, জিয়াগঞ্জ, হবিবপুরে...। ‘লকডাউন’-এর পরে কার্যত কপর্দকশূন্য, জল-খাবারহীন অবস্থায় এই স্রোত ভিন্-রাজ্য থেকে ফিরছে জাতীয় সড়ক ধরে।

Advertisement

বারাণসীর কাপড়ের দোকানের কর্মী মুক্ত কয়াল। বাড়ি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। রোদে ঝলসে যাওয়া শরীর, চোখের কোণে কালি। মঙ্গলবার আসানসোলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাঁকে খাবারের প্যাকেট ও জলের বোতল দিতেই ঝরঝর কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বললেন, ‘‘মা কাঁদছে ঘরে। আর থাকতে পারিনি তাই ওখানে। যানবাহন পাইনি। টানা পাঁচ দিন হাঁটছি।’’

বিহারের বারাউনি থেকে কুড়ি জনের একটি দল হেঁটে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুরে ফিরছিল। রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে রাতে দুর্গাপুরে এসে পৌঁছয় দলটি। অঙ্গদপুরের কাছে দু’জন অজ্ঞান হয়ে যান। খবর পেয়ে দুর্গাপুর পুরসভার ৪ নম্বর বরো চেয়ারম্যান চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবস্থাপনায় তাঁদের লজ়ে এনে খাবার দেওয়া হয়। দলটি জানায়, বিহারে খাবার মিলছিল না। তাই হেঁটেই বাড়ি ফেরার চেষ্টা। আগে থেকেই মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি প্রভৃতি এলাকার ৪৪ জনকে একটি দুর্গাপুরের একটি লজ়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Advertisement

চন্দ্রশেখরবাবু জানান, এ দিন সকালে দুর্গাপুরের মুচিপাড়ায় পুরসভা বাজারের উল্টো দিকের জঙ্গলে মোটরবাইক ফেলে মালদহের বাসিন্দা ১৪ জন লুকিয়ে পড়েন। এলাকাবাসী তাঁদের পথ আটকে পুলিশে খবর দিলে ওই ১৪ জন ভয় পেয়ে এই কাজ করেন বলে জানা যায়। তাঁদেরও ‘লজ়’-এ থাকার ব্যবস্থা করেন চন্দ্রশেখরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। কেতুগ্রামের কুড়ি জনকে অণ্ডালে রাখা হচ্ছে। বাকিরা আপাতত এখানেই থাকবেন। আমাদের ‘ফুড-ব্যাঙ্ক’ থেকে খাবার দেওয়া হবে।’’ বিডিও (অণ্ডাল) ঋত্বিক হাজরা জানান, মোট ৪৮ জন পরিযায়ী শ্রমিককে অণ্ডালের দক্ষিণখণ্ড উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘কোয়রান্টিন’-এ রাখা হয়েছে।

মঙ্গলবার শিল্পাঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ১২টা নাগাদ আসানসোলে দেখা গেল, জাতীয় সড়ক ধরে ১৮ বছরের ছেলে শেখ জামিরুলকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটছেন মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের শেখ আঞ্জির হোসেন। আঞ্জিরের কাঁধে রয়েছে জামাকাপড়ের দু’টি বড় ব্যাগ। জাঞ্জির বলেন, ‘‘বিহারের ডুমরায় রাজমিস্ত্রির কাজ করি। ‘লকডাউন’-এর পরে ঠিকাদার আমাদের দায়িত্ব নিতে চাননি। তাই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরছি।’’ একই কথা জানান, মালদহের হবিবপুরের বাসিন্দা, উত্তরপ্রদেশে রাজমিস্ত্রির কাজ করা মণ্টু শেখও।

এ ছাড়া, কলকাতায় কর্মরত বিহার ও পুরুলিয়ার অনেকে রেললাইন ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। সোমবার বিকেলে তাঁরা পৌঁছন পানাগড় স্টেশনে। তাঁদের মধ্যে ন’জন যাবেন পুরুলিয়ায়। বাকিরা যাবেন বিহারে। সোমবার বিকেলে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ওল্ড কোর্ট মোড়ে দেখা গেল, বাঁশকোপায় একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার কর্মরত ১৫ জন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় বাড়ি ফিরছেন। তাঁদেরই এক জন প্রমোদকুমার যাদব বলেন, ‘‘কারখানায় কাজ বন্ধ। খাবারের সমস্যা হচ্ছে। যে ভাবে হোক বাড়ি ফিরতে হবে।’’

অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য খাদ্য, অস্থায়ী আশ্রয়স্থল, চিকিৎসা পরিষেবা-সহ যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাঁদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ বিষয়ে ‘হেল্পলাইন’ নম্বর চালু করা হবে।’’

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন