Coronavirus

খুললই না বেশির ভাগ রেশন দোকান

বুধবার থেকে রাজ্য জুড়ে বিনামূল্যে চাল, গম, আটা দেওয়ার কথা ছিল অন্ত্যোদয়, পিএইচএইচ, এসপিএইচএইচ ও আরকেএসওয়াই ১-এর (রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা) উপভোক্তাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১৯
Share:

বাঁ দিক থেকে, গলসির রেশন দোকান ফাঁকা।নিজস্ব চিত্র

বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী পাওয়ার প্রথম দিনেই প্রয়োজনীয় দ্রব্য মিলছে না দাবি করে দরজায় তালা ঝুলিয়ে রাখল জেলার অধিকাংশ রেশন দোকান। কোথাও কোথাও আগামী সপ্তাহের আগে রেশন দেওয়া যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তিও দেখা যায়। কাটোয়ার দিকে কিছু দোকান খুললেও রেশন দ্রব্য কম দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে যেতে হয় পুলিশকে। যদিও সংশ্লিষ্ট এলাকার খাদ্য পরিদর্শকদের দাবি, উপভোক্তারা ভুল বুঝে ক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন।

Advertisement

বুধবার থেকে রাজ্য জুড়ে বিনামূল্যে চাল, গম, আটা দেওয়ার কথা ছিল অন্ত্যোদয়, পিএইচএইচ, এসপিএইচএইচ ও আরকেএসওয়াই ১-এর (রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা) উপভোক্তাদের। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “রেশন দোকান খুলবে না, এটা তো হতে পারে না। যা দ্রব্য মিলেছিল, সেটাই গ্রাহকদের বিলি করতে পারত। কেন এ রকম হল, তার রিপোর্ট জেলা থেকে চাওয়া হচ্ছে।’’

খাদ্যমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পরে জেলা খাদ্য নিয়ামক আবির বালি প্রত্যেক খাদ্য পরিদর্শককে রেশন দোকান ধরে-ধরে রিপোর্ট পাঠাতে বলেন। যে সব দোকান খোলা ছিল ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে, তার ছবিও পাঠাতে বলেন। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ১,৩৫৬টি রেশন দোকান রয়েছে। তার মধ্যে কাটোয়া ১, কাটোয়া ২ ও খণ্ডঘোষের কয়েকটি রেশন দোকান উপভোক্তাদের চাল-গম দিয়েছেন।

Advertisement

কালনায় ২৭৮টি দোকানের মধ্যে মাত্র চার জন দোকান খুলে রেখেছিলেন। কিন্তু সামগ্রী না থাকায় উপভোক্তাদের ফিরে যেতে হয়। একমাত্র পূর্ব সাতগাছিয়ার দোকানে কয়েকজন জিনিস পেয়েছেন। রেশন ডিলারদের সংগঠনের কালনার সম্পাদক সুশীল ঘোষের দাবি, “এখনও আটা এসে পৌঁছয়নি। ৫০ শতাংশ দ্রব্য মিললেই রেশন দোকান খোলা হবে। সবাই এক সঙ্গে দোকান খুলব। তাতে কোথাও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকবে না।’’

কালনার রেশন ডিলাররা ঠিক করেছেন, প্রতিদিন ১০০ জন গ্রাহককে রেশনের দ্রব্য দেওয়া হবে। সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানো, হাতশুদ্ধির ব্যবস্থাও থাকবে। কাটোয়া শহরে ২৪টি দোকানের মধ্যে মাত্র দু’টি খুলেছিল। সেখানকার ডিলার সুমন ঘোষ, দাঁইহাটের ডিলার সন্দীপ দাসেরও দাবি, “সব জিনিস এলেই দোকান খুলে দেব। না হলে গ্রাহকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে।’’ মেমারির সফিয়া বেগম, গলসির রাজীব সাঁইরাও জানান, ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ দ্রব্য এসেছে। সব দোকানে সমান না এলে রেশন দোকান খোলা ঝুঁকির।

এ দিকে, বর্ধমান ২ ব্লকের বিভিন্ন রেশন দোকানে বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে জানানো হয়, ‘প্রশাসনিক নির্দেশ অনুযায়ী আগামী মঙ্গলবার থেকে রবিবার পর্যন্ত এক মাসের চাল, আটা ও গম একেবারে দেওয়া হবে’। ভাতার ও বর্ধমান শহরের ডিলারেরাও একই কথা বলেন। কাঞ্চননগরের স্বপন সাহা, ভাতারের পরেশনাথ কোনারেরা বলেন, “সংগঠনের সিদ্ধান্তমতো সব রেশন দোকান সব দ্রব্য না পেলে তালা খোলা হবে না। সামনের মঙ্গলবারের আগে রেশন দেওয়া যাবে কি না বুঝতে পারছি না।’’ বর্ধমান ২ ব্লকের রেশন ডিলারেরা জানান, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও খাদ্য পরিদর্শকের উপস্থিতিতে ওই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যদিও জেলা খাদ্য নিয়ামক আবির বালি বলেন, “এ ভাবে কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। খোঁজ নিতে হবে।’’

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলার সম্পাদক পরেশনাথ হাজরা বলেন, “দ্রব্য না পেলেও রেশন দোকান খুলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যাতে উপভোক্তারা কেন দ্রব্য পেলেন না জানতে পারেন। ওই রকম নোটিস ডিলারেরা কেন দিলেন জানি না। গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও ডিলারের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিলে কিছু বলব না।’’

নির্দিষ্ট সময়ে রেশন পৌঁছল না কেন? জেলার এক রেশন ডিস্ট্রিবিউটর কানাই আগরওয়ালা বলেন, “চার দিন ধরে রেশন দ্রব্য ডিলারদের দেওয়া হচ্ছে। দু’-এক দিনের মধ্যে সবাই দ্রব্য পেয়ে যাবেন।’’ ডিস্ট্রিবিউটরেরাও শ্রমিক সঙ্কটের কথা বলছেন। স্বাস্থ্যবিধি, নিয়ম মেনে দ্রব্য দিতে গিয়েও দেরি হচ্ছে, তাঁদের দাবি।

ডিস্ট্রিবিউটরদের রাজ্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, “চাল-গম ৮০ শতাংশ পৌঁছে গিয়েছে। আটা পৌঁছতে শুরু করেছে। আশা করছি, বৃহস্পতিবার থেকে দোকান খুলতে অসুবিধা হবে না।’’

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন