Coronavirus

বিক্রিবাটা বন্ধ, কিনতে পারছি না ওষুধও

টানা এক মাস ঘরে প্রায় বন্দি হয়ে রয়েছি। আমার মা-ও বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছেন। দু’জনের মাসে প্রায় চারশো টাকার ওষুধ লাগে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০০:৫৩
Share:

কাটোয়ার কাশীগঞ্জপাড়ায় মায়ের সঙ্গে বাপিবাবু। নিজস্ব চিত্র

ছোট থেকে নানা অসুখে ভুগছি। অর্থের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা হয়নি। এখন নানা সমস্যায় হাঁটাচলা করতেও অসুবিধা হয়। কোনও রকমে ব্যাগে কিছু আলতা-সিঁদুর নিয়ে গিয়ে ভাগীরথীর ঘাটে বসে বিক্রি করি। গঙ্গা স্নানের পরে অনেক মহিলা তা কেনেন। দিনে গড়ে শ’দেড়েক টাকার বিক্রিবাটা হয়ে যায়। তা দিয়েই বৃদ্ধা মাকে নিয়ে আমার সংসার চলে যাচ্ছিল। কিন্তু অন্ধকার নেমে এসেছে করোনার জেরে ‘লকডাউন’-এ।

Advertisement

কাটোয়ার কাশীগঞ্জপাড়ায় ভাগীরথীর বাঁধে এক চিলতে ঘরে আমরা মা-ছেলে থাকি। স্নায়ুর রোগে ভুগতে থাকায় মাস তিনেক ধরেই সে ভাবে কাজে বেরোতে পারছিলাম না। এক দিন বিক্রি করলে, তিন দিন যাচ্ছিলাম না। কোনও রকমে সেদ্ধ-ভাত খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছিল। এর মধ্যে করোনা এসে পুরোপুরি ঘরে আটকে দিল।

টানা এক মাস ঘরে প্রায় বন্দি হয়ে রয়েছি। আমার মা-ও বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছেন। দু’জনের মাসে প্রায় চারশো টাকার ওষুধ লাগে। টাকার অভাবে এখন সেই ওষুধও কিনতে পারছি না। শরীর আরও খারাপ হচ্ছে। ব্যবসার জন্য সামান্য কিছু টাকা ঘরে গচ্ছিত ছিল। তা দিয়ে এত দিন চালিয়েছি। এখন হাত একেবারে খালি। রেশন থেকে কিছু চাল পেয়েছিলাম। তা-ও প্রায় শেষ। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা। পাড়ার ছেলেরা কয়েকদিন সাহায্য করেছিলেন। বারবার হাত পাততেও খারাপ লাগে। এক-একটা দিন যেন একটা বছরের মতো কাটছে।

Advertisement

অনেকে আশ্বাস দিচ্ছেন, ধীরে-ধীরে পরিস্থিতি হয়তো স্বাভাবিক হয়ে যাবে। জানি লড়াইটা কঠিন, তবু ধৈর্য ধরে রয়েছি। ‘লকডাউন’ উঠলে কোনও রকমে বেচাকেনা চালু করতে পারলেই চাল-ডাল ঠিক জোগাড় হয়ে যাবে। শুনেছি, হঠাৎ এই ‘লকডাউন’ শুরু হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষ নানা জায়গায় আটকে পড়েছেন, দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা তো তবু ঘরেই রয়েছি। এ কথা ভেবেই মনকে শান্ত করছি।

বাপি পাত্র -আলতা-সিঁদুর বিক্রেতা (কাটোয়া)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement