দমবন্ধ হয়ে দুর্গাপুরে অসুস্থ তিন ছেলেমেয়েও

বদ্ধ ঘরে উনুন, মৃত দম্পতি

পেশায় ট্রাক চালক পরেশচন্দ্র বাউড়ি (৫১) স্ত্রী শীলাদেবী (৪৮), দুই মেয়ে ঊষা, জয়ন্তী ও ছেলে হিরুকে নিয়ে ছোট ছোট দু’কামরার বাড়িতে থাকতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৭
Share:

ঘরে: এই উনুনের কারণেই বিপত্তি ঘটেছে বলে অনুমান। নিজস্ব চিত্র

ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে ঘরের ভিতরে জ্বলছিল উনুন। ডিম রাখার কাগজের খাপ পুড়িয়ে ধোঁয়া দিয়ে তাড়ানো হয় মশাও। জানলা-দরজাও সব বন্ধ। এই রকম ঘরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন দম্পতি ও তাঁদের দুই মেয়ে। লাগোয়া ঘরে ছিলেন ছেলে। সকালে উঠে দেখে গেল, দম্পতির নিথর দেহ। অসুস্থ হয়ে পড়েন তিন ছেলে-মেয়েও। বুধবার দুর্গাপুরের কুড়ুরিয়াডাঙার মনসাতলার ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন ওই দম্পতি।

Advertisement

পেশায় ট্রাক চালক পরেশচন্দ্র বাউড়ি (৫১) স্ত্রী শীলাদেবী (৪৮), দুই মেয়ে ঊষা, জয়ন্তী ও ছেলে হিরুকে নিয়ে ছোট ছোট দু’কামরার বাড়িতে থাকতেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঘরের মেঝেয় বিছানা করে শুতেন পরেশচন্দ্রবাবু। সামনের ঘরে শুতেন ছেলে, পেশায় ট্রাক চালক হিরু। এ দিন সকালে বড় মেয়ে ঊষা পরিচিত এক জনকে কোনও রকমে ফোনে জানান, বাড়ির সকলে অসুস্থ। বিষয়টি জানাজানি হতেই পড়শিরা ডাকাডাকি শুরু করেন। তিনিই কোনও রকমে দরজা খোলেন বলে জানান ঊষা। পড়শিরা জানান, ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, ঘরের মে়ঝেয় পড়ে পরেশবাবু ও শীলাদেবী। ছোট মেয়ে, স্থানীয় বিউটি পার্লারের কর্মী জয়ন্তীও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন হিরুও।

ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় আসে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। পুলিশ জানায়, দম্পতির দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। খানিক বাদে মৃত দম্পতির ছেলে সুস্থ হন। ঊষা ও জয়ন্তীকে ভর্তি করানো হয় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, জয়ন্তীর শারীরিক অবস্থা গুরুতর।

Advertisement

পুলিশের কাছে হিরু দাবি করেন, ‘‘খুব ঠান্ডা। তাই ঘরে কয়লার উনুন নিয়ে শোয়ার পরিকল্পনা করি আমরা। এমনটা হবে ভাবিনি।’’ এলাকায় গিয়ে দেখে গেল, পরেশচন্দ্রবাবুর ইটের বাড়ির মাথায় অ্যাসবেস্টসের চাল। ঘুলঘুলির ব্যবস্থা নেই। সামনের ঘরে কাঠের দরজা। দু’টি ঘরের মাঝে রয়েছে লোহার দরজা। মঙ্গলবার রাতে ওই দরজাটিও বন্ধ ছিল। সামনের ঘরে এক চিলতে জানলায় পাল্লা নেই। ভিতরের ঘরে তিন ফুট বাই আড়াই ফুট চওড়া দু’টি জানলায় বন্ধ ছিল বলে জানান হিরু। মৃতের পড়শি রূপা দাশগুপ্ত জানান, শীত থেকে বাঁচতে গভীর রাতেও পরেশচন্দ্রবাবুরা চা বানাতেন। তাই সামনের ঘরটিতে উনুন রাখা থাকত। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে তা রাখা ছিল ভিতরের ঘরে, জানান মৃতের পরিবারের সদস্যরা।

এই ঘটনার পরে চিকিৎসক ও পুলিশের অনুমান, ঘর বন্ধ থাকায় বাতাস চলাচলে সমস্যা হয়। তার উপরে ছোট ছোট দু’টি ঘরে পাঁচ জনের প্রশ্বাসে কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ঘুমন্ত থাকায় কেউই বিপদ আগেভাগে আঁচ করতে পারেননি। তবে বয়সে অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় পরিস্থিতির সামাল দিতে পারেননি ওই দম্পতি। শহরের চিকিৎসক অর্পণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে তা ঘরের মেঝেতে শোওয়া মানুষজনের উপরে প্রথমে প্রভাব ফেলে। তবে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে ঘুমন্ত অবস্থায় বিপদ এড়ানো মুশকিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন