লোহার কারবার নিয়ে সরব হয়েই খুন নেতা

প্রতিদিনের মতো সন্ধেবেলায় চায়ের দোকানে বসেছিলেন সিপিএম নেতা। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায় কয়েকটি মোটরবাইক। নেতাকে টেনে বাইরে নিয়ে গুলি চালায় পরপর। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে নেতার দেহ।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৭ ০২:২০
Share:

বিক্রমাদিত্য দাস।

প্রতিদিনের মতো সন্ধেবেলায় চায়ের দোকানে বসেছিলেন সিপিএম নেতা। হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায় কয়েকটি মোটরবাইক। নেতাকে টেনে বাইরে নিয়ে গুলি চালায় পরপর। রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে নেতার দেহ। মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দেয় আততায়ীরা।

Advertisement

২০১০ সালের ২৩ অগস্ট সন্ধ্যায় জামুড়িয়ার নিউ সাতগ্রাম কোলিয়ারি চত্বরে খুন হয়ে যান বিক্রমাদিত্য দাস (৫০)। তার কয়েক মাস আগেই পুরভোটে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। ভোটে হেরে যান। এলাকায় তোলাবাজি, অবৈধ লোহা কারবার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যই খুন হতে হয় তাঁকে, দাবি পরিবারের। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তবে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি এখনও।

বিক্রমাদিত্যবাবুর দাদা বিশ্বরঞ্জনবাবু জানান, তাঁদের তিন ভাইয়ের সংসারে তখন সদস্য ছিলেন ১৪ জন। ঘটনার দিন ১২ জন নবদ্বীপে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় সেখান থেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন। বিক্রমাদিত্যবাবু চাঁদায় বাড়িতে ও তাঁর ছেলে, তখন কলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া অমর্ত্য কলেজের হস্টেলে ছিলেন। বিশ্বরঞ্জনবাবু জানান, তাঁরা যখন বর্ধমানে পৌঁছেছেন, সেই সময়ে এক প্রতিবেশী ফোনে ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর দেন। তাঁরা জামুড়িয়া পৌঁছেই থানায় যান। সেখানেই তখন মৃতদেহ রাখা ছিল। দেহ থেকে পাঁচটি গুলি মিলেছিল।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তদন্তে নেমে রাজুকুমার সিংহ, হাসান মহসিন, মুন্না সিংহ ও মৈনাক সিংহ নামে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। জেরা করে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সুজিত সিংহের নাম মেলে। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। আদালতে পেশ করা চার্জশিটে পুলিশ জানায়, সুজিত ও মৈনাক আত্মীয়। তাদের নেতৃত্বে জামুড়িয়ায় তোলাবাজি, লোহার কারবার-সহ নানা দুষ্কর্ম হতো। এলাকায় দলের যুব সংগঠনের দায়িত্বে থাকা বিক্রমাদিত্যবাবু এই চক্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। সে কারণেই তাঁকে খুন হতে হয় বলে দাবি করে পুলিশ। ধৃত চার জন পরে জামিন পেয়ে যায়। পরে ইসিএলের এক কোলিয়ারির ম্যানেজারকে অপহরণে মৈনাক ও সুজিতের নাম জড়ালেও পুলিশ তাদের আর ধরতে পারেনি। সুজিতের নামে বিহার ও উত্তরপ্রদেশেও নানা মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বিক্রমাদিত্যবাবুকে খুনের মামলায় অভিযুক্তেরা এখন এলাকায় নেই বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

সিপিএমের জামুড়িয়া জোনাল সম্পাদক মনোজ দত্তের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘বিক্রমাদিত্যের নেতৃত্বে আমাদের সংগঠন শক্ত হচ্ছিল। তাই চক্রান্ত করে তাঁকে খুন করা হয়। এর পিছনে ছিল তৃণমূল।’’ তৃণমূলের জামুড়িয়া ১ ব্লক সভাপতি সাধন রায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘লোহা কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বেই খুন বলে শুনেছিলাম। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই।’’

মামলার এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হল না কেন? আসানসোল আদালতের সরকারপক্ষের অন্যতম আইনজীবী (এজিপি) বিনয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশ গোড়ায় যত সক্রিয় ভাবে তদন্ত করছিল, সেটা চালু রাখলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেত। কিন্তু মূল অভিযুক্তকে ধরতে না পারার ফলেই মামলা থমকে যায়।’’ বিক্রমাদিত্যবাবুর স্ত্রী শুচিস্মিতাদেবী বলেন, “এত দিনেও বিচার হল না! দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন