শাশুড়ির বিরুদ্ধে মেয়েকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন বৌমা। আড়াই মাসের তদন্তে দেখা গেল অভিযোগটাই মিথ্যা। ভুল অভিযোগ করে আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য কাটোয়ার ওই মহিলার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল কবিরাজপাড়ার বাসিন্দা এক মহিলা অভিযোগ করেন, মাস তিনেক ধরে পেট ব্যাথা ও খাবারে অনীহা দেখা দিয়েছে তাঁর বছর পাঁচেকের মেয়ের। তিন জন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়েও লাভ হয়নি। শেষে এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে মেয়েকে নিয়ে যান তিনি। ওই মহিলার দাবি, দেখা যায় শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। সেখান থেকে একটি বেলুনও বের হয়েছে। মেয়েকে জিজ্ঞেস করে শাশুড়ি এ কাজ করেছে বলেও জেনেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এমনকি, স্বামীকে ঘটনার কথা জানালেও তিনি আমল দেননি বলে তাঁর দাবি। উল্টে মেয়ে-সহ তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও তাঁর অভিযোগ। এরপরেই ৩৭৭, ৩৫৪বি, ৫০৬ ও ৭/৮ পকসো ধারায় শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই মহিলা।
তদন্তে নেমে ওই শিশু ও তার মায়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। এরপরই তদন্ত উল্টো মোড় নেয় বলে পুলিশের দাবি। তদন্তে উঠে আসে, ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই শাশুড়ির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন ওই মহিলা। এরপরেই ৪ জুলাই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সন্দীপ চৌধুরী অভিযোগকারী মহিলার বিরুদ্ধে এসিজেএমের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ জানায়, ওই শিশুক শারীরিক অবস্থার যা জানানো হয়েছিল তা ঠিক, কিন্তু শাশুড়ি এ কাজ করেছেন এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। পারিবারিক ঝামেলার রেশেই এমন কাণ্ড বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে আগেও বধূর নির্যাতনের মামলা করেছেন ওই মহিলা। এক আত্মীয়ের সঙ্গে তাঁর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলেও স্থানীয়দের দাবি। সম্প্রতি শাশুড়ি তা জেনে যাওয়ায় অশান্তি বাড়ে। সেই রোষ থেকেও এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। ওই মহিলার বিরুদ্ধে ১৯৩, ১৯৫, ২০৯ ও ২১১ ধারায় অভিযোগ হয়। বুধবার এসিজেএমের এজলাস থেকে এই মামলার সমন বেরিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫ ধারা অনুযায়ী অভিযোগকারী যে ধারায় আগে মিথ্যা অভিযোগ রুজু করছিলেন সেই একই ধারার প্রাপ্ত শাস্তি তাঁর বিরুদ্ধেও লাগু হবে। অর্থাৎ মহিলা যেহেতু পকসো আইনে শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তাই সেই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার শাস্তি তাঁকেও পেতে হবে।
সরকারি আইনজীবি প্রবীর রায় বলেন, ‘‘শিশুকে ব্যবহার করে শাশুড়ির সাথে শত্রুতা করার এই ঘটনা নজিরবিহীন। যে ধারাগুলি দেওয়া হয়েছেতা অনুযায়ী তদন্তের শেষে মিথ্যা অভিযোগকারীর যাবজ্জীবন সাজাও হতে পারে। মিথ্যা অভিযোগ করে আদালতকে বিভ্রান্ত করলে যে ছাড় পাওয়া যায় না, তার দৃষ্টান্ত এই ঘটনা।’’