Bardhman Water Tank Collapse

মাকে হারিয়ে ট্যাঙ্ক ভাঙার ছবি আঁকার চেষ্টা একরত্তির

জলের তোড় ও সেই লোহার চাদরের ধাক্কায় প্ল্যাটফর্মের ছাউনি ভেঙে পড়লে, নীচে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা ৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন বেশ কয়েক জন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৫
Share:

ছবি আঁকায় ব্যস্ত বালিকা। ছবি: উদিত সিংহ।

সাদা কাগজের উপরে লাল কালির আঁকিবুকি। বছর ছয়েকের মেয়েটি তা আঁকার ফাঁকে বলে উঠছে, ‘এটা জলের ট্যাঙ্ক। এই ভেঙে পড়ল। আর মা ভেসে গেল!’ পাশে বসে চোখের জল ফেলছেন তার দিদিমা সামসুন্নেহা বিবি। কাপড়ের খুঁট দিয়ে চোখ মুছে তিনি বলেন, “নাতনি ভেবেছে, মা জলে ভেসে ভেসে গিয়েছে, আবার ফিরে আসবে। সত্যিটা বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা আমাদের নেই।”

Advertisement

বর্ধমান স্টেশনের ২ ও ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরে বড় জলের ট্যাঙ্কের দু’দিকের লোহার চাদর আচমকা ভেঙে পড়ে গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে। জলের তোড় ও সেই লোহার চাদরের ধাক্কায় প্ল্যাটফর্মের ছাউনি ভেঙে পড়লে, নীচে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা ৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন বেশ কয়েক জন। মৃতের তালিকায় ছিলেন ওই বালিকার মা মফিজা খাতুন (৩৫)। আহত হয় ওই বালিকা। তার মাসির মেয়ে, দিল্লির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ-র ছাত্রী মেহেরুন্নেসা খাতুনও আহত হয়েছিলেন।

মেহেরুন্নেসাকে ট্রেনে তুলতেই বর্ধমান স্টেশনে গিয়েছিলেন মফিজা ও তাঁর মেয়ে। মেহেরুন্নেসার কথায়, “আমি ও বোন বসেছিলাম। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল মাসি। ট্যাঙ্ক ভেঙে জলের তোড়ে আমরা ভেসে যাই।’’ তিনি জানান, সে কথাটাই ঘুরেফিরে বলছে মাসতুতো বোন। দুর্ঘটনার পরে বেশ কয়েক দিন তাঁদের ভর্তি থাকতে হয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ডান পায়ে অস্ত্রোপচারের পরে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছে বালিকা। মেহেরুন্নেসা বলেন, “হাসপাতালে মাকে খুব খুঁজছিল, চিকিৎসক-নার্সেরা সামলাতে পারছিলেন না। আঁকতে ভালবাসে, তাই তখন খাতা, রং-পেন্সিল দেওয়া হয়। হাসপাতালের বিছানায় বসেই স্টেশনের ট্যাঙ্ক, জল পড়ার ছবি আঁকার চেষ্টা করছিল। বাড়ি ফিরেও তা এঁকে চলেছে। আর বলছে, ‘ট্যাঙ্কটা না ভাঙলেই ভাল হত। তাহলে মা হারিয়ে যেত না। আমার পা-ও ভাঙত না’। আতঙ্ক যেন তাড়া করছে ওকে।”

Advertisement

মফিজার বোন, দিল্লির বাসিন্দা মমতাজ বেগম জানান, এই জানুয়ারিতেই মেয়েটিকে স্কুলে ভর্তি করার কথা ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘একরত্তি মেয়েটার উপরে যে বিপর্যয় ঘটে গেল, ওর ভবিষ্যৎ নিয়েই আমাদের চিন্তা এখন। ওকে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়াই এখন আমাদের একমাত্র দায়িত্ব।” দাদু ইয়াদ আলি বলছিলেন, “সব সময় মায়ের খোঁজ করছে। মেয়েটার সামনে কাঁদতেও পারছি না। লুকিয়ে চোখের জল ফেলছি!”

অস্ত্রোপচারের পরে পায়ে এখনও ব্যথা রয়েছে। তার মধ্যেই চলছে আঁকিবুকি কাটা। তার ফাঁকে সে বলে, “এই যে ট্যাঙ্ক ভাঙল, জলে মা ভেসে গেল। মা কবে ফিরবে?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন