ফাগুপুরে দুর্ঘটনায় মৃত তিন

তীর্থ থেকে আর ফিরবে না মা, আক্ষেপ মেয়ের

‘‘তীর্থ যাত্রা প্রায় হয়ে এসেছিল। কিন্তু কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল, মাকে আর ঘরে ফেরাতে পারবো না!’’— দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে বসে নাগাড়ে বিলাপ করছিলেন এক প্রৌঢ়া। থমথমে মুখে বসে রয়েছেন ভিন্ রাজ্যের মানুষগুলো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৬:৪১
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত তীর্থযাত্রীদের বাস। নিজস্ব চিত্র।

‘‘তীর্থ যাত্রা প্রায় হয়ে এসেছিল। কিন্তু কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল, মাকে আর ঘরে ফেরাতে পারবো না!’’— দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে বসে নাগাড়ে বিলাপ করছিলেন এক প্রৌঢ়া। থমথমে মুখে বসে রয়েছেন ভিন্ রাজ্যের মানুষগুলো। ভোরের আলো ফোটার আগে বুধবার এমনই দৃশ্য বর্ধমানের ফাগুপুরে।

Advertisement

বিহারের গয়া থেকে গঙ্গাসাগরে যাওয়ার পথে বাস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক বৃদ্ধা-সহ তিন তীর্থযাত্রীর। মৃতেরা সকলেই মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলার বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোর ৩টে ১৫ নাগাদ তীর্থযাত্রীদের নিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দু’টি বাস গঙ্গাসাগরের দিকে যাচ্ছিল। ফাগুপুরের কাছে আচমকা একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা পাথর বোঝাই একটি ট্রাকে ধাক্কা মারে বাসটি। সজোরে ধাক্কার ফলে বাসের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। বাসের সামনে আসনে বসে ছিলেন সঞ্জয় গুণবন্ত রণথাম (৪২), বাসের খালাসি অজয় ওয়াদকার (২৫) এবং রাজামতি গুলাবরাও বোরসেট্টি (৭০)। পুলিশ জানিয়েছে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওই তিন জনের। যাত্রীরা জানান, দুর্ঘটনার সময়ে প্রায় সকলেই ঘুমিয়ে ছিলেন। দুর্ঘটনার জেরে সকলেই হকচকিয়ে যান। এক তীর্থযাত্রী জানান, দুর্ঘটনার সময়ে বাসের দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়। এর জেরে খানিকটা সময় দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসের ভিতরেই আটকে থাকেন তীর্থযাত্রীরা। তবে বাসের চালক মুহূর্তের মধ্যে চম্পট দেয়। দুর্ঘটনায় ১৮ জন তীর্থযাত্রী জখম হয়েছেন বলে খবর। তাঁদের সকলকেই উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা। তবে জখমদের আঘাত গুরুতর নয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। মাথায়, মুখে অল্পবিস্তর চোট পেয়েছেন সকলে।

Advertisement

বাসযাত্রী তাতিয়া শ্রীমন্ত গায়কোয়াড়, রাজা সূরযকান্ত তাম্বেরা জানান, ১১ মে লাতুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৯৩ জন তীর্থযাত্রী ২টি বাসে চড়ে দেশের বিভিন্ন তীর্থ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। শ্রীমন্ত জানান, দ্বারকা, মথুরা ধাম, কেদার-বদ্রি ঘুরে তাঁরা বিহারের গয়ায় পৌঁছন। সেখান থেকেই মঙ্গলবার বিকেল ৫টা নাগাদ গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। দু’টি বাসের প্রথমটি বেরিয়ে গেলেও দ্বিতীয়টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে লরিতে ধাক্কা মারে বলে জানান রাজা। শ্রীমন্ত বলেন, ‘‘চারিদিকে জখম মানুষের ভিড়। গুরুজি সঞ্জয়বাবু-সহ তিন জন মারা গেলেন।’’

তীর্থ-ভ্রমণ যখন প্রায় শেষের মুখে, তখন এমন দুর্ঘটনা ঘটায় আক্ষেপটা যেন আরও বাড়িয়েছে তীর্থযাত্রীদের। রাস্তায় ধারে বসে মাথা চাপড়াচ্ছিলেন রাজামতিদেবীর মেয়ে শৈলদেবী। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সকলে মিলে আনন্দ করতে করতে বেরিয়ে ছিলাম। কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল। মা যে আর ফিরবে না!’’ লাতুরের বাসিন্দা শঙ্কর মিত্তল ইকাড়ে, বিমলা হাজারেদেও গলাতেও শোকের ছায়া। তাঁদের কথায়, ‘‘তীর্থ-ভ্রমণের আর দিন কয়েক বাকি ছিল। এমন ঘটনার পরে মনে হচ্ছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ থেকেই বঞ্চিত হলাম।’’

এ দিন দুর্ঘটনার পরে তীর্থযাত্রীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। এ দিন দুপুরের দিকে অন্য একটি বাসে করে সকলে রওনা দেন কলকাতার উদ্দেশে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে আটক করেছে পুলিশ। চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে বর্ধমান থানার পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন