আহত শিশুটি। নিজস্ব চিত্র
রেললাইন থেকে দেহ মিলল এক মহিলার। পাশেই গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে ছিল তাঁর বছর দেড়েকের শিশু। রবিবার সকালে বর্ধমান শহরের কালনা গেট ও বাঁকা সেতুর মাঝামাঝি এলাকার ঘটনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হাওড়ামুখী ট্রেন লাইন দিয়ে ছেলেকে কোলে নিয়ে ছুটছিলেন স্থানীয় রায়নগর গ্রামের নন্দিতা মির্দ্যা (২২)। বারবার ‘ট্রেন আসছে সরে যান’ বলে চিৎকার করে সাবধান করা হয় তাঁদের। তার কিছুক্ষণ পরেই দেহ মেলে। দু’জনকেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা হলে পড়শিরাই অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে শিশুটিকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
তবে এ দিন রাত পর্যন্ত ঘটনাটি দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা—সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি রেলপুলিশ। বর্ধমান থানাতেও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। রেল পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রায়নগরের বাসিন্দারা দুর্ঘটনা বলে দাবি করছিলেন। আবার হাসপাতালে মৃতার পরিজনেরা আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করছেন। আমরা দু’পক্ষের বয়ানই রেকর্ড করছি। প্রাথমিক ভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ডায়েরি করে তদন্ত শুরু হবে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃত নন্দিতার শ্বশুরবাড়ি বর্ধমান শহর লাগোয়া রায়নগরের পূর্ব পাড়ায়। বছর চারেক আগে স্থানীয় যুবক বিল্টুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মৃতার বাপের বাড়ি হুগলির পান্ডুয়ার জগন্নাথপুরে। এ দিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দাঁড়িয়ে মৃতার মামা সেন্টু রায় দাবি করেন, “শনিবার সন্ধে ৬টা নাগাদ নন্দিতা ফোন করে কান্নাকাটি করে বলছিল ওকে নাকি বিল্টু মারধর করছে। এমনকী, ট্রেনে গলা দিয়ে মরার কথাও বলেছে।’’ আর এক মামা, বর্ধমান শহরের লাকুর্ডি গ্রামের মণীন্দ্র রায়ের দাবি, “গত কয়েক বছর ধরে অশান্তি চলছে। ছেলে হওয়ার পরেও অশান্তি থামেনি। সপ্তাহ দু’য়েক আগেই বড় অশান্তির জন্যে নন্দিতা পান্ডুয়া চলে গিয়েছিল।’’ মৃতার পরিজনেদের দাবি, বিল্টুর পরকীয়ার জেরেই এই অশান্তি।
যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিল্টু। তাঁর দাবি, “ওই সব মিথ্যা। সরস্বতী পুজো দেখতে যাবে বলে বাড়ি থেকে ছেলেকে নিয়ে বের হয় নন্দিতা। আমি দোকানে বসেছিলাম। তার কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে।’’ পড়শিরা, বিল্টুর বাড়ির সদস্যদের আবার দাবি, ছেলের চিকিৎসা করানোর জন্যে কালনা গেটের কাছেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন নন্দিতা। সেখান থেকে মূল রাস্তা না ধরে তাড়াতাড়ি বাড়ি আসার জন্য রেললাইন দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন নন্দিতা। তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বিল্টুর আত্মীয় মনোরঞ্জন বিশ্বাস দাবি করেন, “বাড়িতে কোনও অশান্তি ছিল না। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে নন্দিতার।’’