এক জনের হাতেই দুই গ্রন্থাগারের ভার

এলাকার মানুষজনের চাহিদায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছিল নানা গ্রন্থাগার। কী অবস্থায় রয়েছে সেগুলি, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মোট গ্রন্থাগারের সংখ্যা ষাটটি। তার মধ্যে আসানসোল মহকুমায় রয়েছে ৩৯টি ও দুর্গাপুর মহকুমায় ২১টি।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:০৯
Share:

রানিগঞ্জের এক গ্রন্থাগারে গ্রাহকের ভিড়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

কোনওটির দরজা খোলে সপ্তাহে দু’দিন। কোনওটির আবার দিন তিনেক। বেশ কয়েকটিতে একেবারে ঝাঁপ পড়ে গিয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার বিভিন্ন গ্রন্থাগারের পরিস্থিতিটা এই রকমই। মূলত কর্মীর অভাবেই এই পরিস্থিতি, বলছেন গ্রাহক থেকে প্রশাসনের আধিকারিক, সকলেই।

Advertisement

পশ্চিম বর্ধমান জেলায় মোট গ্রন্থাগারের সংখ্যা ষাটটি। তার মধ্যে আসানসোল মহকুমায় রয়েছে ৩৯টি ও দুর্গাপুর মহকুমায় ২১টি। আসানসোল ও দুর্গাপুর শহরে দু’টি পৃথক জেলা গ্রন্থাগার রয়েছে। জামুড়িয়া, চুরুলিয়া, রানিগঞ্জ, আসানসোলের মহিশীলা, দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি ও গোপালপুরে একটি করে শহর গ্রন্থাগার রয়েছে। এ ছাড়া দুই মহকুমা মিলিয়ে রয়েছে ৫২টি গ্রামীণ গ্রন্থাগার আছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সব ক’টি গ্রন্থাগারই তৈরি হয়েছিল এলাকার মানুষজনের উদ্যোগে। পরে সেগুলির স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রায় প্রতিটি গ্রন্থাগারেই সময়ের সঙ্গে গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে। আসানসোল জেলা গ্রন্থাগারে ১৯৯৮ সালে সদস্য সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারের বেশি। বর্তমানে সেই সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে বলে গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গিয়েছে। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে জেলা গ্রন্থাগারেও সদস্য সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

Advertisement

কিন্তু গ্রাহকের সংখ্যা বাড়লেও সমস্যা তৈরি হয়েছে গ্রন্থাগার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী-আধিকারিকের সংখ্যা নিয়ে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ষাটটি গ্রন্থাগারের জন্য মোট গ্রন্থাগারিক রয়েছেন ১৮ জন। ইতিমধ্যে ছ’টি গ্রন্থাগারের দরজা এখন আর খোলে না। কর্মী নিয়োগ না হলে আগামী বছর আরও দু’টি গ্রন্থাগারে তালা ঝুলবে। আরও ১৪টি গ্রন্থাগার সপ্তাহে দিন দুয়েক করে খোলা থাকে। একটি গ্রন্থাগার চালান স্বেচ্ছাসেবীরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা গ্রন্থাগারে এক জন গ্রন্থাগারিক এবং দু’জন গ্রন্থাগার সহায়ক থাকার কথা। সেই সঙ্গে পিওন, অ্যাটেনড্যান্ট, রক্ষী, গাড়িচালক, সাফাইকর্মী-সহ নানা পদে আরও আট জনের থাকার কথা। কিন্তু আসানসোল জেলা গ্রন্থাগারে এক জন গ্রন্থাগারিক ছাড়া রয়েছেন আর মাত্র তিন জন কর্মী। গ্রন্থাগার সহায়ক, পিওন, গাড়িচালক, খালাসির মতো কয়েকটি পদে কোনও কর্মীই নেই। দুর্গাপুর জেলা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক ভিড়িঙ্গি শহর গ্রন্থাগারেও সেই দায়িত্ব সামলান। ওই গ্রন্থাগারিক অশোক রায় জানান, তিনি দু’টি জায়গাতেই সপ্তাহে তিন দিন করে কাজ করেন। এ ছাড়া দুর্গাপুর জেলা গ্রন্থাগারে রয়েছেন শুধু এক জন গ্রন্থাগার সহায়ক, এক জন নৈশপ্রহরী ও এক জন অ্যাটেনড্যান্ট।

অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকারের ‘বই ধরো, বই পড়ো’ কর্মসূচি অনুযায়ী বিনা খরচে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে। তবে কর্মীর অভাবে এই কর্মসূচি খানিক ব্যাহত হচ্ছে।” জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্মীর পদ শূন্য হলেই আমরা লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট দফতরে জানাই। শূন্যপদ পূরণের পরিকল্পনা চলছে।’’

গ্রামীণ এলাকার গ্রন্থাগারগুলির পরিস্থিতি আরও শোচনীয়, অভিযোগ গ্রাহকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন