Corruption

প্রকল্পের পুরনো ‘দুর্নীতি’ নিয়ে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা

গত বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পূর্ব বর্ধমান ও হুগলির ১২টি পঞ্চায়েতের ৬২টি কাজ ঘুরে দেখে কেন্দ্রের বিশেষ ‘অডিট’ দল।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২০ ০০:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজ্যে একশো দিনের কাজ দেখতে আসছে কেন্দ্রের বিশেষ ‘অডিট’ দল। এই পরিস্থিতিতে বছরখানেক আগে ওই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে তড়িঘড়ি মাঠে নেমেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

Advertisement

গত বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পূর্ব বর্ধমান ও হুগলির ১২টি পঞ্চায়েতের ৬২টি কাজ ঘুরে দেখে কেন্দ্রের বিশেষ ‘অডিট’ দল। পরিদর্শনে একশো দিনের কাজে বিভিন্ন অনিয়ম খুঁজে পান গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এই প্রকল্পের কর্তারা। কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে ওই সব পঞ্চায়েতের কাছে টাকা ফেরত নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তা না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন কর্তারা। তার ভিত্তিতে খণ্ডঘোষ ব্লক দফতর থেকে গত বছর ২৫ জুনের মধ্যে শশঙ্গা পঞ্চায়েতকে শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, তার পর থেকে প্রশাসনিক স্তর থেকে টাকা ফেরত চেয়ে ‘চাপ’ দেওয়া হয়নি। কিন্তু এ বার ফের কেন্দ্রের বিশেষ ‘অডিট’ দল আসার খবর পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি না করলে একশো দিনের কাজের মজুরির টাকা আটকে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পের কর্তারা।’’

প্রশাসন সূত্রের খবর, মজুরির টাকা কী ভাবে শ্রমিকদের কাছে ফেরত নেওয়া যাবে, সে নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বারবার আলোচনা হয়েছে। শেষে ঠিক হয়েছে, কেন্দ্রীয় দল যে কাজে অনিয়মের রিপোর্ট দিয়েছিল, সেই কাজই শ্রমিকেরা বিনা পারিশ্রমিকে করে দেবেন। তাহলে আর ওই কাজ নিয়ম-বহির্ভূত বলে বিবেচিত হবে না। শশঙ্গা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রকাশ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘তিন মাসের মধ্যে কাজটি করে দেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। কাজও শুরু করেছেন শ্রমিকেরা।’’

Advertisement

গ্রামোন্নয়ন দফতরের রিপোর্টে শশঙ্গা পঞ্চায়েতে খেলার মাঠ, সেচখাল সংস্কার, দামোদরের বাঁধের কাজে অনিয়ম হয়েছে বলে জানানো হয়। সে জন্য ওই সব প্রকল্পের টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছিল, খেলার মাঠ সংস্কারে অর্ধেক কাজ করা হয়েছে। যে পুকুর কেটে সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে, সেই তথ্যও ভুয়ো বলে পরিদর্শকেরা দাবি করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মাঠ সংস্কারে ২,২৯,৪৮৯ ঘনফুট মাটি ব্যবহারের কথা বলা হলেও বাস্তবে ১,১৪,১৫৯ ঘনফুট মাটি ফেলা হয়েছে বলে পরিদর্শকেরা জানিয়েছিলেন। বাকি ১,১৫,৩৪৯ ঘনফুট মাটি ফেলার জন্য যত কর্মদিবস তৈরি হয়েছিল, তার হিসাব করে ৪.২৫ লক্ষ টাকা ফেরত চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। একশো দিনের প্রকল্পের নোডাল অফিসার (পূর্ব বর্ধমান) প্রদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘শ্রমিকদের কাছ থেকে তো আর টাকা ফেরত নেওয়া সম্ভব নয়। সে জন্য কায়িক পরিশ্রম করে তাঁরা খেলার মাঠ সংস্কার করে দিচ্ছেন। তাতে দু’হাজারের বেশি কর্মদিবস তৈরি হবে।’’

শশঙ্গা ছাড়াও ভাতার, আউশগ্রাম ২ ব্লকের বেশ কয়েকটি কাজে ‘অনিয়ম’ হয়েছে বলে পরিদর্শকেরা সেই সময়ে জানিয়েছিলেন। তা অবশ্য মানতে চাননি পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। সেই সময়ে জেলাশাসক প্রতিটি কাজ ধরে চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট দফতর তা মেনে নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন