প্রচুর বকেয়া বাকি, এই অভিযোগে কাটোয়া ও মন্তেশ্বরের বহু এলাকায় বহু অগভীর নলকূপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল বিদ্যুৎ দফতর। চাষিদের অভিযোগ, বিনা বিজ্ঞপ্তিতে এমনটা করা হয়েছে। এর জেরে চাষ-জমিতে জলের অভাব দেখা দিচ্ছে।
কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী, কালনা মহকুমার মন্তেশ্বর ব্লকে প্রায় কুড়ি হাজার সাতশো হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। চাষিদের দাবি, ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতে হাজার খানেক অগভীর নলকূপ রয়েছে। সম্প্রতি বিল বাকি থাকায় সাড়ে তিনশো অগভীর নলকূপে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।
চাষিদের দাবি, চাষের শুরুতে প্রচুর জল দরকার। জলের প্রধান উৎস হল নলকূপগুলি। খাঁদরা গ্রামের চাষি প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘ফলন তো দূরঅস্ত। এখন চাষ কী ভাবে করব, বুঝতে পারছি না।’’ রাজকুমার মুখোপাধ্যায়, সৃষ্টিধর গঙ্গোপাধ্যায়, ঋজু ভাণ্ডারিদের মতো কয়েক জন চাষির দাবি, বাড়ির গোলায় আমন ধান মজুত থাকলেও বস্তা প্রতি দর মিলছে মাত্র ৬৫০ থেকে ৬৬০ টাকা। সেই দরেও কেনার লোক মিলছে না বলে দাবি। এ ছাড়া কিসান মন্ডিতে ধান কেনার শিবির চললেও প্রযোজনের তুলনায় তা খুবই কম বলে দাবি। যদিও ব্লক প্রশাসনের দাবি, ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সহায়ক মূল্যে কালনা মহকুমায় মোট ১৩ হাজার কুইন্ট্যাল ধান কেনা হয়েছে। যার মধ্যে মন্তেশ্বরে কেনা হয়েছে আট হাজার কুইন্ট্যাল।
একই ঘটনা ঘটছে কাটোয়ার পাঁচটি ব্লকেও। চাষিদের দাবি, মাঠে ধান চাষ সবে শুরু হয়েছে। অনেক জায়গায় রয়েছে আলু, সর্ষে প্রভৃতি। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি এই পাঁচটি ব্লকের কয়েকশো চাষি এলপিএসসি মকুব, এমভিসিএ বন্ধ করা, কৃষিতে ৫০ পয়সা প্রতি ইউনিট দরে বিদ্যুতের দাবি জানান কাটোয়ার মহকুমাশাসকের কাছে। মিটার খতিয়ে দেখে বিল পাঠানো ও সাবমার্সিবল পাম্প চালু রাখার দাবিতে দাঁইহাট বিদ্যুত দফতরেও স্মারকলিপি দেন কাটোয়া ২ ব্লকের পলসোনা, শ্রীবাটি, নতুনগ্রামের চাষিরা। শুধু তাই নয়, বিদ্যুতের বিল দেওয়ার পরেও বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ করেছিলেন মঙ্গলকোটের শীতলগ্রামের মৃণালকান্তি হাজরা।
এই পরিস্থিতিতে ‘জেলা কৃষি ও কৃষক বাঁচাও কমিটি’র জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ কুণ্ডুর অভিযোগ, ‘‘নোট বাতিলের জেরে চাষিরা চাষ করতেই হিমসিম খাচ্ছেন। এ বার যোগ হল জলের সমস্যা। প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’
মন্তেশ্বরের বিডিও শাশ্বত দাঁ যদিও বলেন, ‘‘যে সমস্ত চাষির বকেয়া মেটানোর সদিচ্ছা রয়েছে বা যাঁদের সম্প্রতি বিল বকেয়া হয়েছে, তাঁদের সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কৃষি দফতরকে আবেদন করেছি। প্রায় ৩০টি সংযোগ জুড়েও দেওয়া হয়েছে।’’ চাষিরা জানান, সম্প্রতি তাঁরা বিদ্যুৎ দফতরের মন্তেশ্বর স্টেশনের ম্যানেজার বিভাস নাগের কাছে গিয়েছিলেন। চাষিদের দাবি, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।