কুলটিতে নেতাদের মুখে ফিরছে সেই জল

প্রচারে বেরিয়ে এলাকার নেতারা তো বলছেনই। বক্তব্য রাখতে গিয়ে অস্ত্র করছেন হেভিওয়েট নেতারাও। সারা বছর ধরে যা নিয়ে ভুক্তভোগী হন কুলটির মানুষ, সেই জলের সমস্যার কথা প্রবল ভাবে উঠে আসছে ভোটের মাঠেও। বিজেপির উমা ভারতী থেকে কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী, সভা করতে এসে সকলেই প্রশ্ন তুলছেন জল-সঙ্কট নিয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কুলটি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৯
Share:

জলের জন্য লাইন কুলটিতে। নিজস্ব চিত্র।

প্রচারে বেরিয়ে এলাকার নেতারা তো বলছেনই। বক্তব্য রাখতে গিয়ে অস্ত্র করছেন হেভিওয়েট নেতারাও। সারা বছর ধরে যা নিয়ে ভুক্তভোগী হন কুলটির মানুষ, সেই জলের সমস্যার কথা প্রবল ভাবে উঠে আসছে ভোটের মাঠেও। বিজেপির উমা ভারতী থেকে কংগ্রেসের রাহুল গাঁধী, সভা করতে এসে সকলেই প্রশ্ন তুলছেন জল-সঙ্কট নিয়ে।

Advertisement

২০০৬ সালে কুলটিতে একটি বড় জল প্রকল্প তৈরির জন্য অর্থ অনুমোদন করেছিল কেন্দ্রের তৎকালীন ইউপিএ সরকার। তৃণমূল পরিচালিত কুলটি পুর কর্তৃপক্ষকে একটি বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট জমা করার পরামর্শ দেয় তখন রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার। তা জমার পরেই সরকারের অনুমোদন মেলে। প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা। ২০১১ সালে সেটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সময় মতো সেই কাজ শুরু না হওয়ায় টাকা ফেরত চলে গিয়েছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের তরফে এই প্রকল্পটির নোডাল এজেন্ট করা হয় তৎকালীন বাম শাসিত এডিডিএ-কে। তখন চেয়ারম্যান ছিলেন আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, এত বড় প্রকল্প তৈরির পরিকাঠামো কুলটি পুরসভার নেই। তাই এডিডিএ-র তত্ত্বাবধানে সেটি তৈরি হোক। পুর কর্তৃপক্ষ এর বিরোধিতা করে হাইকোর্টে মামলা করেন। বছর কয়েক পরে আদালত এডিডিএ-র পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান পুর কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এডিডিএ-র ক্ষমতারও হাতবদল হয়। তৃণমূল পরিচালিত কুলটি পুরসভা এব এডিডিএ-র মধ্যে জলপ্রকল্প নিয়ে বিবাদ মিটে যায়। মামলা তুলে নেওয়া হয়। প্রকল্প তৈরির জন্য কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন খাতে পাওয়া প্রায় ২৭ কোটি টাকার জলের পাইপও কেনে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় প্রকল্পটি কেন্দ্র ফিরিয়ে নেয়। প্রকল্প অনুমোদন হওয়া থেকে টাকা ফিরে যাওয়া, এই সময়ের মধ্যে কুলটির পুরপ্রধান ও এলাকার বিধায়ক ছিলেন তৃণমূলের উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। প্রকল্প ফিরে যাওয়ার পরে তাঁকে দোষারোপ করে বিরোধীরা আন্দোলনেও নেমেছিল।

সম্প্রতি বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীদের সমর্থনে সভা করতে কুলটিতে এসে জলপ্রকল্প না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। তিনি এলাকার জলসঙ্কটের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহের সরকার কুলটির জন্য জল প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। কিন্তু তা রূপায়ণ হয়নি। টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। তা আমাদের দুর্ভাগ্য।’’ একই বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ম মন্ত্রী উমা ভারতীও। বিজেপির সভায় তিনি আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন, ‘‘ভোট মিটে গেলে আমি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব চেয়ে পাঠাব।’’

ভোট চাইতে এসে বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা জল সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে গেলও তাকে আমল দিতে নারাজ বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বলবাবু। তিনি বলেন, ‘‘একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ভোট মিটে যাওয়ার পরে রাজ্য সরকার ও আসানসোল পুরসভাই যৌথ ভাবে এই সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা করবে।’’

চিনাকুড়ি ও রাধানগর এলাকায় গেলেই দেখা যায়, প্রায় তিন বছর আগে জলপ্রকল্পের জন্য কেনা জলের পাইপ পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই সাফ বক্তব্য, সমস্যা মেটানোর আশ্বাস অনেকের মুখ থেকেই শুনেছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি। শুধু শুকনো কথায় তাই আর চিঁড়ে ভিজবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন