Farmer commits suicide after crop damaged due to Nor'wester

ধানে ক্ষতি দেখে চাষি আত্মঘাতী

এক রাতের ঝড়ে তছনছ ধানজমি দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি যুবক। বাড়ি ফিরেই আত্মঘাতী হন তিনি— ভাতারের কাঁটারি গ্রামে চাষির মৃত্যুর পরে এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের। রবিবারের কালবৈশাখি ঝড়ের তাণ্ডবে জেলা জুড়েই ক্ষতির মুখে পড়েছে বোরো চাষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০০:১৮
Share:

এক রাতের ঝড়ে তছনছ ধানজমি দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি যুবক। বাড়ি ফিরেই আত্মঘাতী হন তিনি— ভাতারের কাঁটারি গ্রামে চাষির মৃত্যুর পরে এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের।

Advertisement

রবিবারের কালবৈশাখি ঝড়ের তাণ্ডবে জেলা জুড়েই ক্ষতির মুখে পড়েছে বোরো চাষ। প্রশাসনের হিসেবে, ৬৯ হাজার হেক্টর জমির ৭০ শতাংশ ধান ঝড়ে গিয়েছে। আর ৩৭ হাজার হেক্টর জমির ৩৩ শতাংশ ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। ধানের দশা দেখে সোমবারই আত্মঘাতী হয়েছিলেন ভাতারের আরও এক কৃষক রাধারমণ সরকার। তাঁর পরিবারেরও দাবি ছিল, ধান দেখে দেনা শোধ করতে না পারার চিন্তায় জমির উপরেই পড়ে যান তিনি। হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁটারি গ্রামের মৃত চাষি সম্রাট রায় (৩২) নিজের ও ভাগের মিলিয়ে ৫ বিঘে জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। সোমবার সকালে খেতে গিয়ে মাথার ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। দুপুরেই বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে ভাতারের বিডিও প্রলয় মণ্ডলের হস্তক্ষেপে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে কাটোয়া হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায়। সম্রাটবাবুর পরিবারের দাবি, চাষের জন্য একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক, সার-বীজের দোকান ও মহাজনের কাছে ধার করেছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা ঋণ ছিল। মৃতের স্ত্রী চৈতালি রায় কথা বলার পরিস্থিতিতে ছিলেন না। ওই দম্পতির সাড়ে তিন বছরের মেয়ে ও দু’ বছরের ছেলে রয়েছে। মৃতের ভাই পিরু রায় বলেন, “শুধু ঋণ নয়, জমির মালিককে বিঘে প্রতি ৫-৬ বস্তা ধান দিতে হতো। ওই সব চিন্তাতেই খেতজমি থেকে ফিরে এসে আত্মঘাতী হয়েছেন দাদা।”

Advertisement

আরও পড়ুন...
এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি বহু গ্রামে, ত্রাণের দাবি

ভাতারের কৃষক সভার নেতা নজরুল হকের দাবি, “ধানে ব্যাপক বিপর্যয় ঘটেছে। প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভাতারের বুকে আরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটবে।” ভাতারের তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধানের ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সম্রাটের মৃত্যু ঠিক কী কারণে হয়েছে, প্রশাসন তার তদন্ত করছে।” আর বিডিও প্রলয় মণ্ডল বলেন, ‘‘মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

মঙ্গলকোটের বালিগ্রামের এক আলু চাষিও সোমবার রাতে মারা যান বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চণ্ডী মিত্র (৪২) নামে ওই চাষির পরিবারের দাবি, চার বিঘে জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসানের মুখে পড়েছিলেন তিনি। ঋণ শোধের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তারপরেই শনিবার রাতে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। চণ্ডীবাবুর দাদা চম্পক মিত্রের দাবি, “অভাব-অনটনের সংসার। ছেলে দুটিও ভিন রাজ্যে কাজে গিয়েছে। ব্যাপক ফলনের জন্য আলুর দাম মেলেনি এ বার। সব মিলিয়ে মানসিক অশান্তিতে ভুগছিল ভাই।” প্রশাসনের অবশ্য দাবি, পারিবারিক বিবাদের জেরেই ওই চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন