জমিতে জল নেই, চাষিরা অবরোধে

টানা বৃষ্টির অভাবে সেচখালে যথেষ্ট জল নেই। তার উপরে বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সাবমার্সিবলের সংযোগ ছিন্ন করতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে, আমন ধান ওঠার মুখে তাঁরা জোড়া সমস্যা পড়েছেন, অভিযোগ জেলার চাষিদের একাংশের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৩
Share:

আউশগ্রামের শিবদায় জাতীয় সড়কে অবরোধে আটকে পড়েছে গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স। শনিবার সকালে। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

টানা বৃষ্টির অভাবে সেচখালে যথেষ্ট জল নেই। তার উপরে বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সাবমার্সিবলের সংযোগ ছিন্ন করতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে, আমন ধান ওঠার মুখে তাঁরা জোড়া সমস্যা পড়েছেন, অভিযোগ জেলার চাষিদের একাংশের। শনিবার সকাল থেকে জমিতে জলের দাবিতে বর্ধমান-সিউড়ি জাতীয় সড়কের (২বি) শিবদা মোড়ে অবরোধ করেন চারটি গ্রামের চাষিরা। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তা ও আউশগ্রাম ১ বিডিও চিত্তজিৎ বসু তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের আশ্বাসে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর অবরোধ ওঠে।

Advertisement

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকেই অবরোধকারীরা পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা তুলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় জমা দিতে চান। তাঁদের দাবি, এই টাকা জমা দিয়ে শিবদা সমবায় সমিতির ২৪টি সাবমার্সিবলে সংযোগ দিক বিদ্যুৎ দফতর। তার পরে ওই সমিতির বকেয়া আদায়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হোক ব্লক প্রশাসনের তরফে। সেই কমিটি বকেয়া আদায় করে বিল শোধ করবে। এ কথা শোনার পর বিদ্যুৎ দফতরের কর্তা সঞ্জয় মণ্ডল সাবমার্সিবলের সংযোগ জুড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

তবে প্রশাসনের আশ্বাসে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে সেচ দফতর। দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ভাস্করসূর্য মণ্ডলের বক্তব্য, “জলাধারে ৫-৬ দিনের মতো জল রয়েছে। নিচু এলাকায় জল পৌঁছবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন।’’

Advertisement

অবরোধকারী চাষিদের অভিযোগ, গত দু’সপ্তাহ ধরে আউশগ্রাম ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচখালে জল নেই বললেই চলে। পাম্প চালিয়েও জল মিলছে না। সৈয়দ মিঠাই, তারক ঘোষদের বক্তব্য, ‘‘মাঠ ফাটতে শুরু করেছে। ফসল ওঠার মুখে জল না পেলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ রেজাউল কবির, গুরুপদ মাঝিদের অভিযোগ, ‘‘সাবমার্সিবলের জল কেনার জন্য সমবায়কে টাকা দিয়েছি। অথচ, সমবায় বিদ্যুতের বিল মেটায়নি। তার গুণাগার আমাদের দিতে হচ্ছে।’’ ওই সমবায় সমিতিতে কোনও কমিটি নেই। ম্যানেজার বিপত্তারণ দেওয়াশির সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

শুধু আউশগ্রাম নয়, সেচের জলের অভাবে ভুগতে শুরু করেছে রায়না ১ ও ২, খণ্ডঘোষ, মেমারি ১ ও ২, মঙ্গলকোট, মন্তেশ্বর, ভাতার, কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার জমিও। সেচ দফতর সূত্রে জানা যায়, ২৩ জুলাই থেকে খরিফ মরসুমে জল ছাড়া শুরু করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত জল ছাড়া বন্ধ রেখেছিল সেচ দফতর। গত তিন দিনেও জল পৌঁছয়নি পূর্ব বর্ধমানের বিস্তীর্ণ জমিতে। সে কারণেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে কৃষি দফতর। পূর্ব বর্ধমানের উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, ‘‘এই রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে ৭০ হাজার থেকে এক লক্ষ হেক্টর জমির ফসল মার খাবে।’’

এ দিন অবরোধের জেরে সমস্যায় পড়েন পণ্যবাহী ও যাত্রিবাহী গাড়িগুলি। পুলিশ জানায়, অ্যাম্বুল্যান্স এবং স্কুলবাস ছাড়া সব গাড়ি আটকে দেন অবরোধকারীরা। যার জেরে বোলপুরমুখী রাস্তার দিকে গোবিন্দপুর পর্যন্ত গাড়ির লাইন পড়ে। বর্ধমানের দিকে বড়া চৌমাথা মোড় পর্যন্ত গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। দু’দিকেই কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত গাড়ি আটকে থাকায় যানজট দেখা দেয়। অবরোধ উঠে যাওয়ার পরেও যান চলাচল স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগে। এই রাস্তাটি কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন যাওয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তা দিয়ে সারা দিন বালি-পাথরের গাড়িও যাতায়াত করে।

বেহালার পাঠকপাড়ার বৃদ্ধ দম্পতি শান্তনু বসুচৌধুরী, সাগরিকা বসুচৌধুরীরা বলেন, ‘‘আমরা বছরে তিন-চার বার এই রাস্তা দিয়ে শান্তিনিকেতন যাতায়াত করি। ভেদিয়ার একফুঁকো বা তালিত রেলগেট নিয়ে আমাদের খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল। এ বার অবরোধে আটকে হাঁসফাঁস অবস্থা হল।’’ হুগলি থেকে শান্তিনিকেতন যাচ্ছিলেন সুভেনিরা বন্দ্যোপাধ্যায়, জুলেফা খাতুনরা। তাঁরাও বলেন, ‘‘এই রাস্তায় নিয়মিত যাতায়াত করি। পুজোর আগে এ ভাবে ভুগতে হলে এই রাস্তা অনেকেই এড়িয়ে যাবে।’’ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দুর্গাপুজোর পরেই কালীপুজোর জন্য চাঁদার জুলুম শুরু হবে এই রাস্তায়। এখন থেকেই কড়া হাতে তা মোকাবিলা করা উচিত বলে ব্যবসায়ীদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন