মৃত ছাত্র স্বর্ণেন্দুর বাড়িতে কেরল পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
ভিন্-রাজ্যে পড়তে যাওয়া এক তরুণের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে বুধবার মৃতের বাড়ি, দুর্গাপুরে এল কেরল পুলিশ। ওই মৃত্যুর ঘটনায় খুনের মামলা শুরু না হওয়ায় পুলিশের কাছে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন স্বর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় (১৮) নামে ওই পড়ুয়ার বাবা।
পুলিশ জানায়, দুর্গাপুরের হেমশিলা মডেল স্কুল থেকে পড়াশোনার পরে কোভালমের একটি বেসরকারি কলেজে হোটেল ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হয়েছিলেন ডিএসপি টাউনশিপের হর্ষবর্ধন রোডের বাসিন্দা স্বর্ণেন্দু। কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে বাড়িভাড়া নিয়ে থাকতেন স্বর্ণেন্দু। গত ২ নভেম্বর দুপুরে সেই ভাড়াবাড়ি থেকেই দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া স্বর্ণেন্দুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ওই দিন দুপুরেই সপরিবার কোভালম রওনা দেন বেনাচিতির বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানের মালিক বিধানবাবু। সেখানেই স্বর্ণেন্দুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, সম্ভবত মানসিক চাপ থেকেই আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন স্বর্ণেন্দু। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, স্বর্ণেন্দুর ক্লাসে উপস্থিতির হার যথেষ্ট ছিল না। তাই পরবর্তী সেমেস্টারে তিনি বসতে পারতেন না। সহপাঠীরা যদিও দাবি করেন, ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি থাকলেই পরীক্ষায় বসা যায়। স্বর্ণেন্দুর ৭৪ শতাংশ উপস্থিতি ছিল। ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাড় দিতেই পারতেন। কর্তৃপক্ষ অনড় থাকার জন্যই এই ঘটনা দাবি করে তাঁরা কলেজে বিক্ষোভও দেখান।
প্রাথমিক ভাবে কোভালম থানার পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করে। বিধানবাবুর দাবি, ‘‘ওই দিন সকাল ১০ টা ৩৬ মিনিটে ছেলে দুর্গাপুরের এক বন্ধুকে ‘গেম’ খেলতে ‘অনলাইন’ হওয়ার জন্য বলে। সেই বন্ধু তখন বাইরে থাকায় সে অনলাইন হতে পারেনি। এর পরে ১১টা ১০ মিনিটে ছেলের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায় বলে জানতে পারি। কী ভাবে এটা সম্ভব?’’ সেই সঙ্গে কেরল পুলিশের দুই আধিকারিক এম উমেশ ও বিনয় কুমারের সামনেও বিধানবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘খুনের লিখিত অভিযোগ করলাম। অথচ, এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করা হল না আজও।’’
এ দিন ওই দুই পুলিশকর্মীর কাছে স্বর্ণাভর বাবা জানান, ঘরের দরজা খোলা ছিল। গলার ফাঁসে গিঁট দেওয়া হয়েছিল নিপুণ ভাবে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে কেউ আত্মঘাতী হয়? ঘটনার পিছনে অন্য কেউ আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছেলের বাড়ির মালিককেও জেরা করা হয়নি।’’ ওই দুই পুলিশকর্মীর সামনেই কেরল পুলিশের বিভিন্ন পদাধিকারীদের ফোন করেও একই অভিযোগ জানান বিধানবাবু। তদন্তকারীরা জানান, আপাতত তাঁরা অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে অভিভাবকদের জবানবন্দি নথিবদ্ধ করতে এসেছেন। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ও প্রাথমিক তদন্তের পরে খুনের মামলা দায়ের করা হতে পারে। তবে তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গড়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত চেয়ে ই-মেল করেছেন এমএসসি-র পড়ুয়া স্বর্ণালী। গত ১১ নভেম্বর সেই মেলের জবাবে বলা হয়, রাজ্যের স্বরাস্ট্র দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। বিধানবাবু বলেন, ‘‘স্থানীয় পুলিশের তদন্তে ভরসা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের আশ্বাসই আমাদের সম্বল। তাতেও কাজ না হলে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’